অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত রক্তিম বড়ুয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে তেল পাম চাষ, ধান সংগ্রহ ও মূল্য বাড়ানোর পরিকল্পনা বৈঠকে নির্ধারণ!
জনসংযোগ শিলচর, ২৮ আগস্ট :- কাছাড়ের কৃষকদের হাতে শক্তি তুলে দিতে এবং কৃষক উৎপাদন সংস্থাগুলিকে আরও কার্যকর করে তুলতে বুধবার কাছাড় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। কেন্দ্রীয় ক্ষেত্রের প্রকল্পের আওতায় গঠিত জেলা পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ কমিটির এই বৈঠকটি হয় অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত, (কৃষি) রক্তিম বড়ুয়ার সভাপতিত্বে।
কৃষি খাতের উন্নয়নে এ ধরনের বৈঠক যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝা গেল উপস্থিতির তালিকাতেই। ছিলেন কাছাড়ের বিভিন্ন কৃষক উৎপাদন সংস্থা ও কৃষক উৎপাদক কোম্পানির প্রধান আধিকারিক ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। কৃষি, পশু চিকিৎসা, মৎস্য এবং কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের শীর্ষ আধিকারিকরা যেমন ছিলেন, তেমনি উপস্থিত ছিলেন নাবার্ডের ব্যাংকিং প্রতিনিধি এবং নাফেড, এপিআরআইএন ও সোনাকোর মতো বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রতিনিধিরাও। অর্থাৎ কৃষকের উন্নয়নের প্রায় সমস্ত স্তরের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদাররা একত্রিত হয়েছিলেন এই বৈঠকে।

বৈঠকের শুরুতেই প্রশাসনের তরফে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়, লক্ষ্য একটাই, কৃষকের আয় বাড়াতে কার্যকরী পরিকল্পনা নেওয়া এবং কৃষক সংগঠনগুলিকে শক্তিশালী করে তোলা। অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত, রক্তিম বড়ুয়া স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “কৃষক উৎপাদন সংস্থাগুলিকে শুধু নামেই গড়ে তুললে হবে না, তাদের হাতে থাকতে হবে বাজারের সুযোগ, প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা, আর্থিক সহায়তা এবং নতুন প্রযুক্তি। প্রশাসন সেই পরিবেশ গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। এফপিও যদি শক্তিশালী হয়, তবে তার সুফল পাবে ছোট এবং মাঝারি কৃষকরাই।”
তিনি আরও জানান, কৃষকের হাতে আসল শক্তি তুলে দিতে হলে সব পক্ষকেই সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি দপ্তর, ব্যাংক, বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং কৃষক প্রত্যেকেরই এখানে ভূমিকা রয়েছে। শুধু জমি বা ফসলের পরিমাণ বাড়ানোই নয়, উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম পাওয়া এবং বাজারে সঠিকভাবে পৌঁছনোর ব্যবস্থাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

এই বৈঠকে আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল তিনটি দিক, তেল পাম চাষের প্রসার, ধান সংগ্রহের সঠিক ব্যবস্থা এবং স্থানীয় কৃষিজ পণ্যে বাড়তি মূল্য যোগ করার জন্য নতুন পথ খোঁজা। তেল পাম চাষকে কাছাড়ে বাড়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সরকারি প্রকল্পের আওতায় কৃষকরা যে সহায়তা পেতে পারেন, তা নিয়ে কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা নানা তথ্য দেন। পাশাপাশি ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে কৃষকদের যাতে ন্যায্য দাম দেওয়া হয় এবং সময়মতো সংগ্রহ করা হয়, সেই বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
স্থানীয় কৃষিপণ্যে মূল্য সংযোজনের জন্য প্রক্রিয়াকরণ ও প্যাকেজিং-এর পরিকাঠামো তৈরির দিকেও জোর দেওয়া হয় বৈঠকে। কৃষিপণ্যকে বাজারে সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে আধুনিক বিপণন ব্যবস্থা এবং ব্র্যান্ডিংয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেন, “আজকের দিনে শুধু উৎপাদন করলেই হবে না। পণ্যের মান, প্যাকেজিং এবং ব্র্যান্ডিং-এর মাধ্যমে দাম বাড়ানো সম্ভব। এ কাজ করতে পারলেই কৃষকের হাতে বাড়তি আয় আসবে।”

বৈঠকে আত্মা (Agricultural Technology Management Agency) প্রকল্পের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এর মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কৃষি সংক্রান্ত উদ্ভাবনী উদ্যোগে উৎসাহ দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে নারকেল উন্নয়ন পর্ষদের অধীনে কাছাড়ের কৃষকদের জন্য বিশেষ প্রকল্পও আলোচনায় আসে।
নাবার্ডের প্রতিনিধিরা বৈঠকে জানান, কৃষক উৎপাদন সংস্থাগুলিকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত। কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, আধুনিক প্রযুক্তির জন্য বিনিয়োগ এবং নতুন ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মতো নানা ক্ষেত্রে নাবার্ড সহযোগিতা করবে।

বৈঠকে কৃষি দপ্তরের বিশেষজ্ঞরা ডিজিটাল বিপণনের প্রসঙ্গও তোলেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষিপণ্যকে রাজ্যের বাইরে পাঠানো এবং বড় বাজারে পৌঁছে দেওয়ার কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়। একই সঙ্গে কৃষক সংগঠনের নেতাদের জন্য ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালুর প্রস্তাবও রাখা হয়।
বৈঠকের শেষে অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত রক্তিম বড়ুয়া আশাবাদী সুরে বলেন, “কাছাড়কে কৃষিক্ষেত্রে অগ্রগামী করতে আমরা সবাই মিলে কাজ করব। এটা শুধু সরকারি প্রকল্প নয়, এটা এক সামাজিক আন্দোলন। কৃষক, প্রশাসন এবং অন্যান্য অংশীদার একসঙ্গে কাজ করলেই কাছাড় কৃষি ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত গড়ে তুলবে।”

আশাবাদী পরিবেশে বৈঠক শেষ হয়। অংশীদারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং প্রশাসনের দৃঢ় পরিকল্পনায় কাছাড়ের কৃষি খাতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।