মুখ্যমন্ত্রীর বরাক সফরের আগে জেলায় প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি
জনসংযোগ শিলচর, ২৬ আগস্ট: শিলচরে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত খুলতে চলেছে। আসন্ন মুখ্যমন্ত্রী ড° হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সফরকে ঘিরে শহর জুড়ে চলছে প্রস্তুতির জোরকদম। প্রশাসনিক বৈঠক, প্রকল্প পর্যালোচনা আর সর্বস্তরে কর্মব্যস্ততার মাঝে মঙ্গলবার এক ভিন্ন দৃশ্যের সাক্ষী থাকলো শিলচর। খাদ্য, সিভিল সাপ্লাই ও ভোক্তা বিষয়ক, খনিজ ও খনিসম্পদ এবং বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী কৌশিক রায় নিজে নেমে পড়লেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্বে শহরের উন্নয়ন যাত্রা যে আরও গতি পাচ্ছে, তা মঙ্গলবারের কর্মসূচিতেই স্পষ্ট হয়ে গেল।
দিনের শুরুটা ছিল ইতিহাসের আবেশে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নতুন মূর্তি স্থাপনের জন্য রাঙ্গিরখাড়ি এন.এস. এভিনিউতে চলছিল প্রস্তুতির শেষ মুহূর্তের কাজ। সেখানেই উপস্থিত হয়ে মন্ত্রী কৌশিক রায় জানালেন, নেতাজির স্মৃতিরক্ষা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। তাঁর কথায়, “নেতাজির আদর্শ বরাকবাসীর কাছে অনন্ত প্রেরণা। এই মূর্তি শুধু শিলচরের নয়, গোটা আসামের গর্বের প্রতীক হয়ে উঠবে। আগামী প্রজন্ম নেতাজির বীরত্ব ও দেশপ্রেমকে নতুনভাবে উপলব্ধি করবে এই স্মারকের মাধ্যমে।” মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার হাতেই মূর্তিটির উদ্বোধন হবে বলে মন্ত্রী জানান, “এটি কেবল একটি মূর্তি নয়, বরং বরাকবাসীর আত্মপরিচয়ের প্রতীক।’’


এরপর জেলা আয়ুক্তের কার্যালয়ের নবনির্মিত সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মন্ত্রী কৌশিক রায় এলিভেটেড রোড থেকে শুরু করে মধুরাঘাটের সেতু এবং শিলচর-হাইলাকান্দি সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলির অগ্রগতি নিয়ে বিশদ আলোচনায় জানালেন, উন্নয়ন কখনও সময়ের গণ্ডি পেরোতে পারে না। তাঁর কথায়, “প্রতিটি প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত সময়সীমা আছে। সেই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতেই হবে। শিলচরবাসীর বহু বছরের প্রত্যাশা পূরণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গুণগত মানের সঙ্গে কোনও আপস হবে না। উন্নয়ন মানে শুধু কাগজে পরিকল্পনা নয়, বাস্তবে তার নিখুঁত বাস্তবায়ন।”
মন্ত্রী বৈঠকে একাধিক দিক তুলে ধরেন। এলিভেটেড রোডের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই প্রকল্প সম্পন্ন হলে শিলচরের যানজট সমস্যা অনেকাংশে মিটবে এবং নগরজীবনে গতি আসবে। মধুরাঘাট সেতুর বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেন, “এটি শুধুমাত্র দুটি প্রান্তকে সংযুক্ত করার প্রকল্প নয়, বরং এই সেতু অর্থনীতির সেতু হবে। নতুন বাণিজ্যিক সম্ভাবনা খুলবে, মানুষের যাতায়াত আরও সহজ হবে।” শিলচর-হাইলাকান্দি রোডের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “এই চার লেনের রাস্তা স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গেম চেঞ্জার হবে। মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছনো হবে সহজতর, অর্থনীতি পাবে নতুন গতি।”


শুধু পরিকাঠামো নয়, মন্ত্রী মানুষের জীবনমান উন্নত করার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন। নতুন রেশন কার্ড অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে তিনি স্পষ্ট নির্দেশ দেন যোগ্য পরিবার যেন কোনওভাবেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয়। তিনি বলেন , “আমরা স্বচ্ছতা চাই, গতি চাই। সাধারণ মানুষকে সুবিধা পৌঁছে দেওয়াই সরকারের প্রধান দায়িত্ব।” অরুণোদয় ৩.০ প্রসঙ্গে তিনি জানান, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলির হাতে অর্থনৈতিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের লক্ষ্য, কোনও বিলম্ব ছাড়াই তা বাস্তবায়ন।”
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যসভা সাংসদ কনাদ পুরকায়স্থ, বিধায়ক দিপায়ন চক্রবর্তী, মিহির কান্তি সোম, খলিল উদ্দিন মজুমদার, কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত, মৃদুল যাদবসহ জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। তাঁদের উপস্থিতি উন্নয়নের প্রতি সমন্বিত প্রতিশ্রুতিকে আরও দৃঢ় করল।
সবশেষে বলা যায়, শিলচর আজ এক পরিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে। এলিভেটেড রোড, মধুরাঘাটের সেতু ও চার লেনের রাস্তা, এই তিন প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে শিলচর পাবে এক নতুন পরিচয়। মন্ত্রী কৌশিক রায় বলেন, “বরাক উপত্যকার মানুষ উন্নয়নের যোগ্য। মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে আমরা সেই স্বপ্ন পূরণ করব। উন্নয়নের গতি থামবে না।” এই দৃঢ় উচ্চারণে স্পষ্ট, শিলচর শুধু উন্নয়নের মানচিত্রে নয়, আসামের অগ্রগতির শিখরে নিজের নাম লিখতে চলেছে।