অসমকে দেশের শীর্ষ পাঁচ রাজ্যের মধ্যে একটি রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াসের প্রশংসায় মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল
জনসংযোগ, শিলচর ১২ আগস্ট: বরাক-ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সমানভাবে উন্নয়নের বার্তা, ৫০ কোটি টাকার পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ও একাধিক প্রশাসনিক দপ্তর নিয়ে যাত্রা শুরু ধলাই সম-জেলা!
ধলাইয়ের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন মঙ্গলবার বাস্তব রূপ পেল। ফরেস্ট ইন্সপেকশন বাংলো প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হল ধলাই সম-জেলা আয়ুক্তের দপ্তর। ফুল, পতাকা, শঙ্খধ্বনি ও উচ্ছ্বাসে ভরপুর এই উদ্বোধনীতে এক অনন্য উৎসবমুখর পরিবেশে উপস্থিত ছিলেন লোকনির্মান সড়ক, পশুপালন ও ভেটেরিনারি ও মৎস্য দপ্তরের মাননীয় মন্ত্রী শ্রী কৃষ্ণেন্দু পাল, শিলচরের সাংসদ শ্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, দলাইয়ের বিধায়ক নীহার রঞ্জন দাস, কাছাড়ের জেলা শ্রী মৃদুল যাদব, নবনিযুক্ত সম-জেলা আয়ুক্ত, শ্রী রক্তিম বড়ুয়া,কাছাড় জেলার সিনিয়র পুলিশ সুপার নোমাল মাহাত্তা সহ প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহলের শীর্ষ ব্যক্তিত্বরা।
প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জনসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার এই উদ্যোগকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু পাল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার দৃঢ় নেতৃত্বে অসম দ্রুত এগিয়ে চলেছে দেশের শীর্ষ পাঁচ রাজ্যের মধ্যে স্থান করে নেওয়ার পথে। এই সরকার শুধু উন্নয়নের স্বপ্ন দেখায় না, বাস্তবায়নও করে দেখায়”।
ধলাই পিডব্লিউডি ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় তিনি অতীতের সরকারের উদাসীনতার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। পাথারকান্দিতে সাব -ডিভিশন ঘোষণার দাবিতে এক অতিরিক্ত উপায়ুক্তের আত্মবলিদান, অথচ বছরের পর বছর দাবি পূরণ না হওয়া,এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার সেই দাবি পূরণ করে পাথারকান্দিকে সম-জেলার মর্যাদা দিয়েছে। “এটি কেবল প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আশা পূরণের স্বীকৃতি”, বলেন তিনি।
মন্ত্রী এদিন ঘোষণা করেন, অসম সরকার ৭৮টি সম-জেলা গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে ৩৯টি ইতিমধ্যেই কার্যকর হয়েছে, আরও ১০টি আগামী ১৫ আগস্ট, ২০২৫-এর মধ্যে গঠিত হবে। ধলাইয়ের জন্য ৫০ কোটি টাকার বিশেষ পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করে তিনি জানান, সম-জেলা আয়ুক্তের দপ্তরের অধীনে ভূমি রাজস্ব, খাদ্য ও নাগরিক যোগান, পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন, ট্রান্সফরমেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ডিডিএমএ ও আরকেজি সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শাখা চালু হয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, মুখ্যমন্ত্রীর তৎপর নেতৃত্বে ভাঙ্গরপার ব্রিজ মাত্র ২৫ দিনে সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে এবং গ্যামন ব্রিজ ১৬ জুলাই নির্ধারিত সময়ের আগেই খুলে দেওয়া হয়েছে। চা-বাগান শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য মডেল স্কুল ও প্রতিটি বাগানে কংক্রিট রাস্তা নির্মাণের প্রকল্পও দ্রুত এগোচ্ছে। স্থানীয় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বরাক উপত্যকা উন্নয়ন বিভাগের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী কৌশিক রায়ের অবদানের জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

শিলচরের সাংসদ পরিমল শুক্লবৈদ্য এই দিনটিকে কাছাড়ের ইতিহাসে এক মাইলফলক বলে বর্ণনা করেন এবং ধলাইয়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। ধলাই -র বিধায়ক নীহার রঞ্জন দাস একে “ঐতিহাসিক দিন” বলে আখ্যা দিয়ে জানান, অসম মালা প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকার সড়ক উন্নয়ন বরাদ্দ হয়েছে। এছাড়াও তিনি ধলাইয়ে চক্র আধিকারিকের কার্যালয়, ৫০ শয্যার হাসপাতাল, পৌরসভা ও বেকার যুবকদের জন্য আইটিআই স্থাপনের পরিকল্পনার কথা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন।

শিলচর বিধায়ক দিপায়ন চক্রবর্তী তার ভাষনে মুখ্যমন্ত্রীকে “অসমের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ” বলে উল্লেখ করেন এবং ‘নিজুত মইনা’, ‘অরুণোদয়’ সহ মহিলাদের ক্ষমতায়ন ও শিক্ষামূলক প্রকল্পের সাফল্য তুলে ধরেন।

কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত, মৃদুল যাদব তার ভাষনে জানান, ৭৮ জন জেলা প্রশাসনের আধিকারিক ইতিমধ্যেই ধলাই সম-জেলা দপ্তরে কাজ শুরু করেছেন। নবনিযুক্ত সম জেলা আয়ুক্ত, রক্তিম বড়ুয়া স্বাগত ভাষণে স্বচ্ছতা ও সুশাসনের প্রতিশ্রুতি দেন।

অনুষ্ঠানে জেলা বিজেপি সভাপতি রূপম সাহা, এপিডিসিএল ডিরেক্টর নিত্য ভূষণ দে, সিইও জেলা পরিষদ প্রণব কুমার বরা, ডিআইজি কঙ্কন জ্যোতি শইকীয়া, জেলা পরিষদ সভাপতি কঙ্কন শিকিদার, সহকারী আয়ুক্ত নিহাত হাওলাই ও মাসি টোপনো, এবং সহকারী আয়ুক্ত তথা ভারপ্রাপ্ত উপ সঞ্চালক তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগ, বরাক উপত্যকা,শিলচর, শ্রীমতী দীপা দাসসহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।