আধুনিকতার ছোঁয়া, আর বিলাসিতার ছায়া অবহেলিত প্রকৃতির বিধান-রক্ষণাবেক্ষণ
শর্মিষ্ঠা রায় কর্মকার, শ্রীভূমি :- আধুনিকতার ছোঁয়া এবং বিজ্ঞান এর যুগে উন্নয়ন এবং বিলাসী তার ছায়ায় যেন মুছে গেছে প্রকৃতির রক্ষণাবেক্ষণ। দায়িত্ব হারা হয়েছে সমাজ।জীবমণ্ডল যে নির্ভরশীল প্রকৃতির উপর তা ভুলেই গেছে অধিকাংশ মানব সমাজ। বিলাসবহুল জীবনযাত্রা ই তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।যার ফলস্বরূপ অসমের বন্যা বারংবার বুঝিয়ে দিতে আসে “যিনি রক্ষক তিনি-ই সংহারক”।

নবজাত শিশু যেমন মায়ের আঁচলে বেড়ে ওঠে নদীমাতৃক দেশ আসাম ও যুগ যুগ থেকে বেঁচে আছে একইভাবে। নদ-নদী গুলো আমাদের জীবনকে উৎকৃষ্ট করে রেখেছে যেমন ফসল, পশু পালন, বৃক্ষরোপণ, সুস্থ পানীয়ের অভাব পূরণের মধ্য দিয়ে। পঞ্চতত্ত্বের পাঁচটি উপাদানের মধ্যে একটি উপাদান জল, যা জীবন রক্ষাকারী ও আনন্দের দায়ক জল ছাড়া জীবন অকল্পনীয়। জল যেমন আমাদের জীবন দান করে তেমনি প্রাণনাশেরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এক কথায় বলা যায় ” যিনি রক্ষক তিনি সংহারক “নদীর সংহার রূপটির জন্য দায়ী বর্তমান সমাজ। এবং সমাজের অচেতন মানুষ। প্রকৃতিকে যারা শুধুমাত্র নিজের স্বার্থেই উপভোগ করে , তার রক্ষণাবেক্ষণ এর কথা মাথায় রাখে না। বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ফাঁদে পড়ে উপেক্ষা করে প্রকৃতির বন্ধন, রক্ষণ, ও পর্যবেক্ষণ। এসব জীবমণ্ডল বাঁচিয়ে রাখার উপায় কে অগ্রাহ্য করে যারা
জীবন অতিবাহিত করছেন, তাঁরা ই একমাত্র দায়ী প্রকৃতির সেই কালান্তর রূপের জন্য।
প্রকৃতি আমাদের কাছে মাতৃস্বরূপ, সে তার সন্তানের জন্য প্রতিনিয়ত কর্মরত, তাইতো প্রকৃতির নিয়মেই আমরা চলমান। প্রকৃতি এক দিকে গঠন করে অন্যদিকে বিনাশ করে। প্রকৃতি একদিকে কোমল অন্যদিকে কঠোর। বন্যা এমনই একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার মধ্য দিয়ে আমরা প্রকৃতির ভৈরবী রূপটিকে দেখতে পাই। সে কারণে অসমের জন্য বন্যা একটি মারাত্মক ও মহা অভিশাপ।
তাইতো বলা যায়
” বন্যার জলে ভেসে যায় প্রাণী, মুছে যায় মানবতার গ্লানি। শোনা যায় শুধু অবুঝ শিশুর ক্রন্দনধ্বনি।।”
মানব দেহের শিরা – উপশিরার মত অসমের ভিতর দিয়ে মহাবাহু ব্রহ্মপুত্র ও বরাকের অসংখ্য শাখা নদী-নালা খাল-বিল প্রবাহিত হচ্ছে। অতি বর্ষণের অস্বাভাবিক রূপান্তর হচ্ছে বন্যা। বন্যায় রাস্তাঘাট টেলিযোগ, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে চারিদিক।নদীর প্রচন্ড স্রোতের টানে সবকিছু খড় কুটোর মতো ভেসে চলেছে মৃত্যুও মানুষকে টেনে নিতে পিছপা হয়নি। বৃদ্ধ অসুস্থ মানুষের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছে মানুষকে নিজের ঘর বাড়ি ছেড়ে শিবিরে এসে ঠাই নিতে হয়েছে। শিবিরগুলোতে ও মানুষকে জায়গা দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাই গ্রামাঞ্চলের মানুষগুলো রাস্তার ধারে নিজেদের মাথা গুজার ব্যবস্থা করে দিন গুজরান করতে দেখা গেছে। দিনমজুর, কর্মরত আর্থিক উপার্জনের সুবিধা হারিয়ে বসেছেন তাই খাদ্যের ও জলের অভাব তারা হারে হারে উপলব্ধি করছেন। বৃদ্ধ অসুস্থ মানুষের অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছে। সবুজ কৃষিভূমি জলের নিচে তলিয়ে যাওয়ার ফলে নিম্ন শ্রেণীর সাধারণ মানুষের আর্থিক অনটন নেমে এসেছে, তাদের আশার মধ্যে নিরাশার অন্ধকার নেমে এসেছে। আজ চারিদিকে কান পাতলেই শোনা যায় মানুষের হাহাকার ধ্বনি। শহরে বড় বড় অট্টালিকা বা বিজ্ঞান এর যুগে উন্নত বিলাসবহুল বাড়ি ঘরে বসবাসকারী মানুষও বন্যার কবল থেকে রক্ষা পায়নি। যা বরাক উপত্যকার শিলচর শহরের মানুষ ২০২২ সালে ই বুঝে গেছে প্রকৃতির কি ক্ষমতা। কোনো বিজ্ঞান আর আধুনিকতার ছোঁয়া কাজে আসেনি। বন্যা এমন একটি সমস্যা যার সমাধান প্রায়ই মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তবুও কিছু উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে কিছুটা হলেও বন্যা সমস্যার প্রতিকার সম্ভব বলে ধারণা বুদ্ধিজীবী মহলের। বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ।বিজ্ঞান যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছে, কিন্তু মানুষ যে প্রকৃতির কাছে কতখানি অসহায় তা বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি।তাই প্রতিকার এর একমাত্র উপায় ই হলো প্রকৃতির বিধান মেনে জীবনযাত্রা,আর সরকার কর্তৃক বিজ্ঞানের যুগে উন্নত ব্যবস্থা কে কাজে লাগিয়ে নালা-নর্দমা, নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গভীরতা বৃদ্ধি, নদী-উপনদীর তীর বা বাঁধ নির্মাণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার এবং উন্নত চিন্তাধারায় কিছু টা হলে স্বস্তি যোগাবে বন্যা কবলিত অসমকে।