ভয়ংকর বন্যায় মৃত্যু ৪৮! ত্রাতা বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি, দিলেন অ্যাম্বুলেন্স-বোট-টাকা!

সংবাদ সংস্থা, ০৮ সেপ্টেম্বর :- দশকের মধ্যে ভয়াবহতম বন্যায় মৃত্যু ৪৮! ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ, জলের নীচে ১৪০০ গ্রাম! ত্রাতা হয়ে উত্তীর্ণ হলেন বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি ভারতীয় স্পিনার!

রীতিমতো ভয়াবহ পরিস্থিতি পঞ্জাবে (Punjab Floods Death Count Rises To 48)। গত ৩৭ বছরের মধ্যে এত ভয়াবহ বন্যা দেখেনি বাংলার পড়শি (Punjab Floods)। টানা অতি ভারী বৃষ্টির জেরে জলের নীচে তলিয়ে গিয়েছে পঞ্জাবের বিস্তীর্ণ এলাকা। ভয়ংকরতম বন্যায় এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জনের! ১.৭৬ লক্ষ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এই অবস্থায় ত্রাতা হয়ে উত্তীর্ণ হলেন ভূমিপুত্র হরভজন সিং (Harbhajan Singh)। বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি ভারতীয় স্পিনার বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদও। এবার নিজের রাজ্যের দুর্দিনে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ভাজ্জি। শুধুই সাংসদ তহবিলের টাকা থেকেই ত্রানকার্যে হাত বাড়ালেন না। নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়েই অ্যাম্বুলেন্স-বোটের বন্দোবস্তও করে দিলেন। ‘হরভজন মোট ১১টি স্টিমার নৌকা দান করেছেন। ৮টি তাঁর এমপিএলএডি তহবিল থেকে এবং আরও তিনটি তাঁর নিজের পকেট থেকে। প্রতিটি নৌকার দাম প্রায় ৪.৫ থেকে ৫.৫ লক্ষ টাকা। গুরুতর রোগীদের নিকটবর্তী হাসপাতালে সহজে স্থানান্তরের জন্য তিনি তিনটি অ্যাম্বুলেন্সও কিনেছেন।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্র জানিয়েছে এমনটাই। ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া হরভজন তাঁর বন্ধুবান্ধব এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন পঞ্জাবের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। হরভজনের অনুরোধে সাড়া দিয়ে এক ক্রীড়া সংস্থা ৩০ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে। যেখানে তার দুই প্রিয় বন্ধুও যথাক্রমে ১২ লক্ষ এবং ৬ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন। রাজ্যসভায় আম আদমি পার্টির প্রতিনিধিত্ব করেন হরভজন। তিনি পাঞ্জাবের পরিস্থিতি সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন যে প্রয়োজনে আরও সহায়তা প্রদান করা হবে।

সরকারি রিপোর্ট বলছে, বন্যার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঞ্জাবের ২৩টি জেলা। ৪৮ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৩.৪৫ লাখ মানুষ। প্রায় ১৪০০ গ্রাম জলের নীচে চলে গিয়েছে। ২০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করার পাশাপাশি ৫ হাজার জনকে পাঠানো হয়েছে ত্রাণ শিবিরে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঠানকোট। এখানে মৃত্যু ৬ জনের, নিখোঁজ ৩। লুধিয়ানায় ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। লাগাতার বৃষ্টি চলছে পাঞ্জাবের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। ক্ষতির দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে গুরুদাসপুর জেলা। এখানে ৩২৪টি গ্রাম ডুবে গিয়েছে, এরপর অমৃতসর (১৩৫টি গ্রাম) এবং হোশিয়ারপুর (১১৯টি গ্রাম)। ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য জেলাগুলির মধ্যে রয়েছে বার্নালা, বাথিন্ডা, ফিরোজপুর, পাতিয়ালা, এসএএস নগর, সাঙ্গরুর, তরন তারান এবং ফাজিলকা। কেন্দ্রকে চিঠি রাজ্যের পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রকে চিঠি লিখে ৬০ হাজার কোটি টাকা সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে রাজ্য সরকার। পর্যাপ্ত সংখ্যক এনডিআরএফ বাহিনী এবং সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে কোনো কমতি রাখা হবে না বলে রাজ্যের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেইমতো উদ্ধারকাজে নেমেছে সেনা, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর ১২টি দল, প্রস্তুত আরও ৮টি দল। প্রায় ৩০-৩৫টি হেলিকপ্টার, ১১৪টি নৌকা এবং রাজ্য একটি হেলিকপ্টারও উদ্ধারকাজে নিযুক্ত। গুরুতর এই পরিস্থিতিতে পঞ্জাবকে ‘বিপর্যস্ত রাজ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছে আম আদমি পার্টির সরকার। পরিস্থিতি এতই খারাপ যে, উদ্ধার কাজে নামতে হয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকেও। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মোট ২৩টি দল জোরকদমে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামিকাল পাঞ্জাবে যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।