প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী ড° হিমন্ত বিশ্ব শর্মার স্বাস্থ্য বিকাশ উদ্যোগের প্রশংসা
জনসংযোগ শিলচর, ২৪ আগস্ট :- শিলচরে রক্তদান শিবির উদ্বোধন, বৃক্ষ রোপন সহ বেজায় কর্মসূচি তে যোগদান রাজ্যপাল আচার্য্যের। “মানবতার সেবা করাই আমাদের সর্বোচ্চ কর্তব্য”। স্বাস্থ্যসেবা কেবল চিকিৎসা নয়, এটি যত্ন, সহানুভূতি এবং সমাজের প্রতি অঙ্গীকারের প্রতিফলন। রেডক্রসের মতো প্রতিষ্ঠান মানবিকতার ভিত্তি রচনা করে।” রবিবার শিলচরে এক উষ্ণ ভাষণে এই মর্মস্পর্শী বার্তা শোনালেন আসামের রাজ্যপাল লক্ষ্মণপ্রসাদ আচার্য।

দ্বি-দিবসীয় সরকারি সফরের দ্বিতীয় দিনে রাজ্যপাল সকালে রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমে গিয়ে প্রার্থনা অর্পণ করে দিন শুরু করেন। সেখান থেকে তিনি পৌঁছান শিলচর রেডক্রস সোসাইটির প্রাঙ্গণে, যেখানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি এবং রক্তদান শিবির উদ্বোধন করে তিনি সামাজিক দায়িত্ববোধের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেন। এই সময় রাজ্যপাল বলেন, “রক্তদান একটি মহৎ কর্ম। এটি জীবন বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি, যা মানবতার সত্যিকারের পরিচয়।”

এরপর তিনি যান শিলচর রেডক্রস শিশু হাসপাতালের মুল সভাস্থলে , যেখানে তাঁর সম্মানে এক বিশেষ সভার আয়োজন করা হয়েছিল। এই সভায় রাজ্যপাল তাঁর বক্তব্যে বলেন,
“রেডক্রস বহু বছর ধরে মানবতার সেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। রক্তদান থেকে শুরু করে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, শিশুদের চিকিৎসা থেকে শুরু করে দুর্যোগের সময় সহায়তা, প্রতিটি ক্ষেত্রে রেডক্রস সমাজকে ভরসা দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান শুধু চিকিৎসা দেয় না, মানুষের মনোবলও বাড়ায়।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশ আজ স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদর্শী নেতৃত্বে ‘আয়ুষ্মান ভারত’, স্বাস্থ্য অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন এবং মিশন ইন্দ্রধনুষের মতো প্রকল্পগুলি কোটি কোটি মানুষের কাছে চিকিৎসা পৌঁছে দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ডা. হিমন্ত বিশ্ব শর্মার উদ্যোগে আসাম আজ স্বাস্থ্য সেবায় অগ্রগামী রাজ্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। রেডক্রসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়েই মানবিক সেবার পরিধি আরও বিস্তৃত করা সম্ভব।”
“হাসপাতাল মানে শুধু চিকিৎসা নয়, হাসপাতাল মানে আশা। রেডক্রস শিশু হাসপাতাল আজ হাজারো পরিবারের আশার আলো। তাই এই প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা মানেই আমাদের সমাজকে শক্তিশালী করা” তিনি বলেন।

রাজ্যপাল স্বামী বিবেকানন্দের বাণী উদ্ধৃত করে বলেন, “মানুষকে ভালোবাসা মানেই ঈশ্বরকে সেবা করা। সমাজের সেবার মধ্যে ঈশ্বরসেবা নিহিত। রেডক্রসের কাজ সেই বাণীরই বাস্তব রূপ।”
এর আগে, অনুষ্ঠানে শিলচরের বিধায়ক দিপায়ন চক্রবর্তী জানান যে, রেডক্রস শিশু হাসপাতালটি ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং বর্তমানে এটি ৬৪ বেডের সু-সজ্জিত একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে ৬ জন চিকিৎসক, ১৬ জন

নার্স এবং ৬৮ জন কর্মী কাজ করছেন। এছাড়াও রয়েছে একটি এএনএম নার্সিং স্কুল, যেখানে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। হাসপাতালটিতে একটি আধুনিক ব্লাড ব্যাংকও রয়েছে, যা সমগ্র অঞ্চলকে সেবা দিয়ে চলেছে।
কোভিড-১৯ মহামারির সময় রেডক্রসের অবদানের প্রসঙ্গ টেনে বিধায়ক দিপায়ন চক্রবর্তী বলেন,“কোভিডের কঠিন সময়ে যখন পৃথিবী থমকে গিয়েছিল, তখনও শিলচর রেডক্রস হাসপাতালের কর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে ২৪ ঘণ্টা জরুরি পরিষেবা ও অ্যাম্বুল্যান্স চালু রেখেছিলেন। তিনি বলেন কোভিডের সময় এক সপ্তাহব্যাপী একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয় এবং সেই শিবিরে ৫০০ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলো।

বিধায়ক আরও ঘোষণা করেন যে মুখ্যমন্ত্রী ডা. হিমন্ত বিশ্ব শর্মার উদ্যোগে হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নে এক কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় হবে হাসপাতালের প্রথম তলা নির্মাণে, যা সম্পূর্ণ হলে হাসপাতালের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং শিশুস্বাস্থ্য সেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

অনুষ্ঠান শেষে রাজ্যপাল সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “আজ শিলচরে এসে আমি রেডক্রসের অসাধারণ কাজ কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। রেডক্রস শুধু দুর্যোগ মোকাবিলায় নয়, কমিউনিটি হেলথ, রক্তদান এবং শিশুস্বাস্থ্য সেবায় যে ভূমিকা পালন করছে, তা অনন্য। এই সেবা অব্যাহত রাখতে সরকার ও জনগণের সমান সহযোগিতা প্রয়োজন।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাছাড় জেলাআয়ুক্ত মৃদুল যাদব, (আইএএস)সিনিয়র পুলিশ সুপার নোমাল মাহাত্তো ,(এপিএস)অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত, অন্তরা সেন, সহকারী আয়ুক্ত, নেহাত হাওলাই, রেডক্রস শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ প্রমুখ।