স্বামী বিবেকানন্দের বাণী উদ্ধৃত করে জনগণের সেবা প্রদান করার আহ্বান, কাছাড়ের উন্নয়নে সন্তোষ প্রকাশ
জনসংযোগ শিলচর, ২৪ আগস্ট :- “জীবে প্রেম করে যেজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর” স্বামী বিবেকানন্দের এই অনবদ্য বাণী উচ্চারণ করে অসমের রাজ্যপাল লক্ষ্মণ প্রসাদ আচার্য জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় আধিকারিকদের উদ্দেশে বলেন, “জনগণকে সেবা করা মানে ঈশ্বরকে সেবা করা। প্রত্যেকটি বিভাগের আধিকারিকদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে হবে।” শনিবার জেলা আয়ুক্তের কার্যালয়ের নবনির্মিত সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উচ্চস্তরীয় পর্যালোচনা বৈঠকে রাজ্যপাল আধিকারিকদের মনে করিয়ে দেন, তাঁদের প্রতিটি পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে হবে।

রাজ্যপাল বলেন, “আপনারা যে আসনে বসে আছেন, তা আস্থার প্রতীক। সেই ক্ষমতাকে ব্যবহার করুন মানুষের কল্যাণে। দায়িত্বকে সমন্বিতভাবে পালন করলে তবেই প্রত্যেক প্রকল্পের সর্বোচ্চ সুফল জনগণের কাছে পৌঁছাবে।”

তিনি স্বামী বিবেকানন্দের বাণী উদ্ধৃত করে বলেন, “নিঃস্বার্থভাবে সমাজের জন্য কাজ করলেই সত্যিকার অর্থে সফলতা আসবে ।”
দেশসেবায় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার ভুয়সী প্রশংসা করে রাজ্যপাল আচার্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, “তিনি কেবল দেশের নয়, বিশ্বের প্রকৃত নেতা। তাঁর উন্নয়নমুখী নীতি প্রশাসনের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। আমরাও তাঁর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ভিশনের সঙ্গে নিজেদের সামঞ্জস্যপূর্ণ করে কাজ করবো।”

নেশামুক্ত সমাজ গঠনের ডাক, যোগ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিয়ে রাজ্যপাল নেশামুক্তি অভিযানকে জোরদার করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি বিদ্যালয়ে যোগব্যায়াম শিক্ষা চালুর মাধ্যমে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করার উপর জোর দেন। তিনি যুবসমাজকে শৃঙ্খলা, দেশপ্রেম ও নেতৃত্বের গুণ বিকাশে এন সি সি ও এন এস এস কার্যক্রমে যুক্ত হতে উৎসাহিত করেন।

‘এক পেড মাঁ কে নাম’ অভিযানে সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান অমৃত বৃক্ষ অভিযানকে সমর্থন করে রাজ্যপাল বলেন, “মায়ের নামে একটি গাছ রোপণ করা প্রকৃতি ও আগামী প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক।”
এর আগে, কাছাড়ের উন্নয়নে সম্ভাবনা ও পর্যালোচনা বৈঠকে কাছাড়ের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেন।রাজ্যপাল অমৃত সরোবর প্রকল্পের মানোন্নয়নের নির্দেশ দেন, যেখানে পতাকা দণ্ড, বসার আসন ও ছাউনি স্থাপন করার উপর জোর দেন। কাছাড়কে মাছচাষে সম্ভাবনাময় জেলা উল্লেখ করে তিনি হ্যাচারি সুবিধা ও মাছের পোনা উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দেন।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনঔষধি প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নকে সাধুবাদ জানিয়ে রাজ্যপাল বলেন, “সাশ্রয়ী দামের ওষুধ পৌঁছে দিতে জনঔষধি কেন্দ্রগুলিকে জনপ্রিয় করতে হবে।” তিনি ‘নিক্ষয় মিত্র’ উদ্যোগকে আরও ত্বরান্বিত করে যক্ষামুক্ত অসম গড়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান।

পর্যালোচনা সভা শেষে সন্তোষ প্রকাশ করে গভীর বার্তা দিয়ে বৈঠক শেষ করেন রাজ্যপাল, “আপনাদের হাতে আছে ক্ষমতা, পদমর্যাদা। সেই অবস্থানের মাধ্যমে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই প্রকৃত সেবা। সমাজ উন্নত হলে রাজ্য উন্নত হবে, রাজ্য উন্নত হলে দেশও উন্নত হবে।”

পরে, সংবাদ মাধ্যমের সাথে কথা বলতে গিয়ে রাজ্যপাল বলেন, “কাছাড়ের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের গতি দেখে আমি সন্তুষ্ট। জেলা প্রশাসনের আন্তরিকতা প্রশংসনীয়। এই প্রচেষ্টা আগামী দিনে আরও উন্নয়নের পথ সুগম করবে।”

পরবর্তীতে রাজ্যপাল কাছাড় জেলার সিনিয়র পুলিশ সুপার নোমাল মাহাত্তো এবং সিকিউরিটি ফোর্সের শীর্ষ আধিকারিকদের সাথে বৈঠক করে আইনশৃঙ্খলার খোঁজখবর নেন।
রবিবার সকালে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন ও রেডক্রস শিশু হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন,এবং দুইদিনের সফর শেষে বিকেলে গুয়াহাটি ফিরে যাবেন।