শহর জুড়ে বর্ণাঢ্য র্যালি, কলেজে সচেতনতামূলক সভা — প্রতিরোধ, পরীক্ষা ও চিকিৎসায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
জনসমক্ষে শিলচর, ১৪ আগস্ট :- এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে ও সামাজিক সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে কাছাড় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বুধবার থেকে শুরু হল জোরদার তথ্য, শিক্ষা ও যোগাযোগ (আইইসি) প্রচারাভিযান। জেলা আয়ুক্তের কার্যালয় প্রাঙ্গণে জমায়েতের মাধ্যমে কর্মসূচির সূচনা হয়। জেলা আয়ুক্ত শ্রী মৃদুল যাদব, আইএএস, অনুষ্ঠানের সূচনায় বক্তব্য রাখেন এবং পরে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা প্রদর্শনের মাধ্যমে শহরের রাস্তায় এক বর্ণাঢ্য র্যালির সূচনা করেন।
উদ্বোধনী ভাষণে জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব বলেন, “ভয় ও বৈষম্য দূর করাই এইচআইভি প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। একটি সচেতন সমাজই আমাদের এই লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। আমাদের সবার উচিত সময়মতো পরীক্ষা করানো, আক্রান্তদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানো এবং চিকিৎসা ও সহায়তার সুযোগ নিশ্চিত করা। এই প্রচারাভিযান শুধু তথ্য নয়, এটি সহমর্মিতা, গ্রহণযোগ্যতা ও সামষ্টিক দায়িত্বের প্রতীক।”
জেলা আয়ুক্তের এই আহ্বান উপস্থিত স্বাস্থ্যকর্মী, ছাত্রছাত্রী, স্বেচ্ছাসেবক এবং সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগায়। প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও প্রাণবন্ত স্লোগানে সজ্জিত র্যালিটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে, সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয় সচেতনতামূলক বার্তা।

র্যালির পর শিলচরের মহিলা কলেজে উদ্বোধনী সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মূল বক্তা ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম সঞ্চালক, ডাঃ শিবানন্দ রায়। তিনি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, সময়মতো শনাক্তকরণ, নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ এবং ভ্রান্ত ধারণা ও সামাজিক বৈষম্য দূর করার উপায় নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠানের আকর্ষণ বাড়িয়ে তোলে এবং যুব সমাজের দায়িত্ববোধকে জোরদার করে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কাছাড়ের অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত (স্বাস্থ্য) ড: খালেদা সুলতানা আহমেদ, সহকারী আয়ুক্ত ও শাখা আধিকারিক (স্বাস্থ্য) দীপা দাস,স্বাস্থ্য বিভাগের যুগ্ম সঞ্চালক ডাঃ শিবানন্দ রায়, মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ সুজিত তেওয়ারি, ডিপিএম (এনএইচএম) রাহুল ঘোষ, ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস অফিসার সৈয়দ সলিম হক এবং ডিসহা ক্লাস্টারের ডেটা মনিটরিং অ্যান্ড ডকুমেন্টেশন অফিসার তাসনিম নেসা।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী দিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার ও গ্রামীণ এলাকায় ধারাবাহিকভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলবে। পথনাটক, র্যালি, ইন্টারঅ্যাকটিভ কমিউনিটি মিটিং এবং আইইসি উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছানো হবে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে যুব সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ, নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য লক্ষ্যভিত্তিক উদ্যোগে।
উল্লেখযোগ্য যে, এই প্রচেষ্টা জাতিসংঘের ইউএনএইডস ‘৯৫-৯৫-৯৫’ বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। অর্থাৎ, ৯৫ শতাংশ এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি তাঁদের অবস্থা জানতে পারবেন, ৯৫ শতাংশ আক্রান্ত নিয়মিত চিকিৎসা পাবেন এবং চিকিৎসাধীন ৯৫ শতাংশ রোগীর ভাইরাস দমন নিশ্চিত হবে। জেলা প্রশাসনের আশা, ধারাবাহিক প্রচেষ্টা ও সামাজিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাচাড় একটি বৈষম্য-মুক্ত, এইচআইভি-মুক্ত সমাজের দিকে এগিয়ে যাবে।