স্বাস্থ্যসচেতন কাছাড়: জেলার স্বাস্থ্য পরিসেবার মানোন্নয়নে জেলা প্রশাসনের দৃঢ় পদক্ষেপ;

জনসংযোগ শিলচর, ২৮ জুলাই :- কাছাড় জেলার জনস্বাস্থ্য খাতে এক ইতিবাচক পরিবর্তনের আভাস মিলল সোমবার অনুষ্ঠিত জেলা স্বাস্থ্য সমিতির মাসিক পর্যালোচনা সভায়। জেলাশাসক মৃদুল যাদব, (আইএএস)এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত (স্বাস্থ্য) ডাঃ খালেদা সুলতানা আহমেদ, এসএমডিভি সিভিল হাসপাতাল ও এসএমসিএইচ-এর উর্ধ্বতন চিকিৎসকবৃন্দ, বিভিন্ন স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রধান, পিডব্লিউডি (বিল্ডিং), শ্রম, সমাজকল্যাণ ও শিক্ষা বিভাগের প্রতিনিধিরা, সোনাই বিধানসভা কেন্দ্রের মাননীয় বিধায়কের প্রতিনিধি সহ জেলা ও ব্লক পর্যায়ের স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মীবৃন্দ।

বৈঠকের শুরুতেই জেলার স্বাস্থ্য খাতে অনবদ্য অবদান রাখার জন্য কিছু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীকে জেলা প্রশাসক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের হাত ধরে সংবর্ধিত করা হয়। উল্লেখযোগ্যভাবে, অসম স্টেট ব্লাড ট্রান্সফিউশন কাউন্সিল কর্তৃক প্রাপ্ত ‘Certificate of Excellence’-টি এসএম দেব সিভিল হাসপাতালের ব্লাড সেন্টারের সুপারিন্টেনডেন্ট ও ল্যাবরেটরি সুপারভাইজারকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়। পাশাপাশি, বর্ষীয়ান স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ এস. কে. নন্দীকেও তাঁর আজীবন সেবামূলক ভূমিকার জন্য সম্মানিত করা হয়।

সভায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। শিগগিরই জেলায় ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রভিত্তিক মেগা স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করা হবে, যার লক্ষ্য ০-১৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সেবা প্রদান। এই শিবিরগুলিতে এসএমসিএইচ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হবে।

এদিনের বৈঠকে অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের ANC রেজিস্ট্রেশন, ইউ-উইন ভিত্তিক টিকাদান কার্যক্রম, চা বাগান শ্রমিকদের মজুরি ক্ষতিপূরণ প্রকল্প, মুখ্যমন্ত্রীর ড্যাশবোর্ড ইন্ডিকেটর পর্যালোচনা ছাড়াও ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ও জাপানি এনসেফালাইটিস প্রতিরোধে এনভিবিডিসিপি কার্যক্রমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়।

জেলাকে টিবি-মুক্ত করার লক্ষ্যে ২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে অন্তত ৫০% গ্রাম পঞ্চায়েতকে টিবি-মুক্ত ঘোষণার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সদ্য নির্বাচিত পিআরআই সদস্যদের ‘নিকষয় মিত্র’ হিসেবে টিবি রোগীদের দত্তক নেওয়ার মাধ্যমে এই কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়।

কাটিগড়া ও ছোট দুধপাতিল এমজি মডেল হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়ন, এসএম দেব সিভিল হাসপাতাল সহ অন্যান্য উচ্চ রোগী-সংখ্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের কোয়ালিটি সার্টিফিকেশনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কার্য সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। চোখের রোগে আক্রান্তদের জন্য ক্যাটারেক্ট স্ক্রিনিংয়ের সম্প্রসারণেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য মিশন ও জল জীবন মিশনের মধ্যে সমন্বয় সাধনে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও আশা কর্মীদের মাধ্যমে জেজেএম প্রকল্পগুলির মানচিত্র তৈরি করে আগস্ট ২০২৫-এর মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য দপ্তর ও পিডব্লিউডি (বিল্ডিং)-এর বাস্তুকারদের সরকার নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে সমস্ত নির্মাণকাজ শেষ করতে বলা হয়।

এছাড়াও, সরকার নির্ধারিত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোটোকল অনুসারে দেওয়ান টি এস্টেটে ‘স্বাস্থ্যবান শ্রমিক যোজনা’ চালু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সবশেষে, জেলা প্রশাসক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য সকল স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ইনচার্জদের কঠোরভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।

এই বৈঠকে যেমন উৎসাহ ছিল, তেমনই ছিল পরিকল্পনার দৃঢ়তা। জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বিত পদক্ষেপে কাছাড় জেলা এক নতুন স্বাস্থ্যপরিচালনার পথে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে লক্ষ্য, একটি সুস্থ, সচেতন ও স্বাস্থ্যবান সমাজ গড়ে তোলা।