‘বন্দর’ গুঁড়িয়ে ফাইভস্টার বাগান রেলায় ডুরান্ডের নকআউটে!

সংবাদ সংস্থা, ১০ আগস্ট :- শক্তিশালী ডায়মন্ড হারবার এফসি-র বিরুদ্ধে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টের কার্যত কঠিন ম্যাচ হতে চলেছে! খেলা শুরুর একদিন আগে এমনটাই ময়দান বলছিল। তবে শনিবার যুবভারতীতে ম্যাচ শেষের পর জায়ান্ট স্ক্রিনে ফুটে উঠল মোহনবাগান ৫, ডায়মন্ড হারবার

হোসে মোলিনার সবুজ-মেরুন, কিবু ভিকুনার দলের উপর গোলের রোডরোলার চালিয়ে চলে গেল নকআউটে। মোহনবাগান ফের বুঝিয়ে দিল তাদের জাত। টাইমলাইন ধরে যদি দেখা হয়, তাহলে লিখতে হবে, খেলা শুরুর ১৪ মিনিট হাই-প্রেসিং ফুটবলে মোহনবাগানকে প্রায় আটকে রেখেছিল ডায়মন্ড হারবার। তবে ১৫ মিনিটে মোহনবাগানের হয়ে ফোঁস করেছিলেন জেমি ম্যাকলারেন। সাহাল আবদুল সামাদের পাস থেকে, একটা হাফ চান্স পেয়েছিলেন তিনি। প্রথম পোস্টের কোনাকুনি জায়গায় ছিলেন ম্যাকলারেন।এরকম ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পোস্টে বল রাখা বেশ চাপের হয়ে যায়, ম্যাকলারেন চেষ্টা করেছিলেন সুস্নাত মালিকের পায়ের মধ্যে দিয়ে নেট করার। কিন্তু ডায়মন্ড হারবারের গোলকিপার তা আটকে দেন। তবে এই ঘটনার ঠিক চার মিনিটেই বাগান জনতাকে সেলিব্রেশনে মাতিয়ে দেন অনিরুদ্ধ থাপা। আবারও সেই সাহাল। তার নো লুক পাস থেকে থাপা ডিফেন্ডারকে ব্যবহার করেই কার্ল শটে দুরন্ত গোল করেন। ডায়মন্ড হারবারও যে ছাড়ার পাত্র নয়। প্রতি আক্রমণে ছ’মিনিটে তারা গোল শোধ করে দেয়।মোহনবাগানের ফাঁকা ধূ ধূ রক্ষণের সুযোগ নিয়ে লুকা মায়েসেন গোল করে বেরিয়ে যান। আইএসএলে পঞ্জাবের অধিনায়কত্ব করা লুকা বুঝিয়ে দিলেন যে, তিনি গোলমেশিনই। ৩৬ বছরের স্লোভেনিয়ান বিশাল কাইথকে ওয়ান টু ওয়ান পেয়ে অনায়াস প্লেসিংয়ে গোল করে দিলেন। কিবু আর মোলিনার মগজাস্ত্রের লড়াই যেন, দাবার চালের মতো হয়ে যাচ্ছিল। ৩৫ মিনিটে ম্যাকলারেন স্কোরলাইন ২-১ করে দিলেন| মোহনবাগানের গত মরসুমের বর্ষসেরা স্ট্রাইকার, শিকারিবাঘের মতোই গোলের গন্ধ পেয়ে যান বক্সের সামনে। ডায়মন্ড হারবারের প্রায় ফাঁকা রক্ষণের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করলেন তিনি। অজি সুপারস্টার সুস্নাতকে একা পেয়ে স্রেফ প্লেসিং করেই দলকে এগিয়ে দেন। অনেকটা লুকার গোলের সঙ্গে এই গোলের মিল ছিল। তবে কিবুর ব্রিগেড বিরতির আগে কিছুটা চাপে পড়ে গিয়েছিল। বেশ কিছু ভুলভ্রান্তি করে ফেলেছিল তারা।

বিরতির পরেই জেমি উঠে গিয়ে জেসন কামিংসকে জায়গা করে দেন। মোলিনা দলে বদল আনলেও, কিবু একই টিম নামান। তবে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পরপর জোড়া ধাক্কা খেয়ে ডায়মন্ড হারবার কার্যত ম্যাচ থেকে ছিটকেই যায়| বক্সের মধ্যে লিস্টন কোলাসোকে ফাউল করে রেডকার্ড দেখে বেরিয়ে যান ডিফেন্ডার নরেশ সিং। আর রেফারি পেনাল্টি দিতেই কোলাসো বুলেট শটে ৩-১ করে ফেলেন স্কোরলাইন। এবার দশ জনের ডায়মন্ড হারবারকে পেয়ে মোহনবাগান আরও জাঁকিয়ে বসে। ৬৪ মিনিটে সামাদের সৌজন্যে আরও একটি গোল চলে আসে। লিস্টন-কামিংস আর তাঁর দুরন্ত লিংক আপে মোহনবাগান হেসেখেলে ৪-১ করে ফেলে। যদিও সাহাল প্রথমবার গোলের সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করেছিলেন। দ্বিতীয় সুযোগে বল জালে জড়ান| প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে ফিরে আসা বল থেকে গোল করেন সাহাল। মোহনবাগান যে আরও গোল করতে চলেছে, তার ইঙ্গিত ছিলই তাদের খেলায়| আর সেটাই সত্যি প্রমাণিত হল। ৮০ মিনিটে কামিংসের গোলে মোহনবাগান পাঁচ গোলের মালা পরাল ডায়মন্ড হারবারকে! দ্বিমুকুটজয়ী ভারতসেরা মোহনবাগানের খেলা দেখে কে বলবে যে, ম্যাচের আগে চোট আর কার্ডের জোড়া সমস্যায় জেরবার ছিল সবুজ-মেরুন। চোটের কারণে ছিলেন না শুভাশিস বসু, মনবীর সিং, আলবার্তো রডরিগেজ, কিয়ান নাসিরি এবং সুহেল ভাট। আর কার্ড সমস্যায় পাওয়া গেল না দীপেন্দু বিশ্বাসকেও! ওদিকে ডায়মন্ড হারবার এবার ডুরান্ডে অভিষেক করেছে| মহামেডান স্পোর্টিংকে ২-১ গোলে প্রথম ম্যাচে হারিয়ে লুকারা দ্বিতীয় ম্যাচে বিএসএফের বিরুদ্ধে ৮-১ গোলে জিতেছিল। সেখানে তৃতীয় ম্যাচে কিবুর ব্রিগেড যেন হারিয়েই গেল। অথচ দলে লুকা ছাড়াও বিদেশি বলতে ছিলেন ব্রাজিলিয়ান ক্লেইটন সিভেইরা ও স্পেনের মাইকেল কোর্তাজার| ছিলেন জবি জাস্টিনের মতো ফুটবলারও! তবে ডায়মন্ডের ডুরান্ড অভিযান এখনও শেষ হয়নি। তাদের এখনও নকআউটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।