মাদকবিরোধী অভিযান ও সামাজিক সচেতনতায় অভিনব প্রয়াস :- জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ‘নোজি’ ম্যাসকট ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র উদ্বোধন

জনসংযোগ শিলচর, ৩০ জুলাই :- কাছাড় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাদকবিরোধী লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ হল মঙ্গলবার, এদিন জেলা আয়ুক্ত, শ্রী মৃদুল যাদব, (আইএএস) আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নোজি’ নামক ম্যাসকট এবং একটি ভাবনাধর্মী স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উদ্বোধন করেন। ‘নেশা মুক্ত ভারত অভিযান (NMBA)-এর আওতায় আয়োজিত এই বিশেষ সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে কাছাড়ের জেলা আয়ুক্তের কার্যালয়ের নবনির্মিত সম্মেলন কক্ষে এক অভূতপূর্ব উৎসাহের আবহে উপস্থিত ছিলেন নানা মহলের প্রতিনিধি, তরুণ অংশগ্রহণকারী ও সমাজের সচেতন নাগরিকবৃন্দ।

উল্লেখ্য, ম্যাসকট ‘নোজি’ শুধু একটি চরিত্র নয়, বরং মাদকবিরোধী সংগ্রামে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন, প্রতিবাদ ও প্রত্যয়ের প্রতীক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এটি ডিজাইন করেছেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজ্যুয়াল আর্টস বিভাগের মেধাবী ছাত্র সৌরভ ঋষি, যাকে জেলা প্রশাসনের তরফে প্রশংসাপত্র প্রদান করে সংবর্ধনা জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রকাশিত স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রটি আবেগ, মনস্তত্ত্ব ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে মাদকের প্রভাবকে তুলে ধরেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যুব ক্লাব এবং গ্রামীণ পর্যায়ে প্রদর্শনের জন্য পরিকল্পিত এই চলচ্চিত্র সমাজে সচেতনতা ও সহমর্মিতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে নির্মিত হয়েছে।

এই উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের অংশীদার সংস্থা ও ব্যক্তিদের সম্মান জানানো হয়। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজ্যুয়াল আর্টস বিভাগ এবং আর্ট অফ লিভিং ফাউন্ডেশনের শিক্ষকদের সম্মানিত করা হয় তাঁদের দায়বদ্ধ ও সৃজনশীল ভূমিকার জন্য।

জেলা আয়ুক্ত, মৃদুল যাদব বলেন, “শুধু আইন প্রয়োগ নয়, হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ও মন জয় করাই আমাদের লক্ষ্য। নোজি এবং এই চলচ্চিত্র, দুটোই সেই বৃহৎ সামাজিক আন্দোলনের অংশ যার মাধ্যমে আমরা সমাজকে যুক্ত করতে চাই এই লড়াইয়ে।”

এই দিনেই ‘নারী ক্ষমতায়নের জন্য সংকল্প হাব’-এর সহযোগিতায় “মানব পাচার ও ডাইনি প্রথা নির্মূল” বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়। সভার সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা আয়ুক্ত, (WCD) হেমাঙ্গ নবিশ,এ. সি. এস। অনুষ্ঠানে শিক্ষা, পিএনআরডি ও স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। স্বাগত ভাষণে সহকারী আয়ুক্ত তথা জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক (ভারপ্রাপ্ত) অঞ্জলি কুমারী, (এসিএস), সমাজের সর্বস্তরের সম্মিলিত উদ্যোগের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

জেলা আইন সহায়তা পরিষদের আইনজীবী ধর্মানন্দ দেব, রাজ্যের মানব পাচার ও ডাইনি প্রথা প্রতিরোধ নীতিমালার ওপর আলো ফেলেন। পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে সাব-ইন্সপেক্টর মহেশ্বরী দাস নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা উপস্থিত সকলের সাথে ভাগ করেন ও জেলার কিছু স্পর্শকাতর অঞ্চলে ঘটে চলা উদ্বেগজনক ঘটনার ওপর আলোকপাত করেন।

দিনের শুরুতে জেলা আয়ুক্তের কার্যালয় থেকে এক বর্ণাঢ্য সচেতনতামূলক র‍্যালি শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পথে পরিক্রমা করে। র‍্যালিতে অংশগ্রহণকারীরা মাদক, মানব পাচার ও ডাইনি প্রথা বিরোধী শ্লোগানে মুখর ছিলেন, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে যথেষ্ট সাড়া ফেলে।

মাদকবিরোধী অভিযান, মানব পাচার ও কুসংস্কার প্রতিরোধে কাছাড় জেলা প্রশাসনের এই বহুমুখী, সৃজনশীল ও জনমুখী উদ্যোগগুলি সমাজে এক নতুন আশাবাদের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। জেলা আয়ুক্ত, মৃদুল যাদবের দক্ষ নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন এগিয়ে চলেছে একটি সুস্থ, সচেতন ও ন্যায়নিষ্ঠ ভবিষ্যতের পথে।