ব্যতিক্রম নয় বরাক উপত্যকা সহ পার্শ্ববর্তী রাজ্য ত্রিপুরা ও
যুব বিচিত্রা প্রতিনিধি,শ্রীভূমি: ২১ শে ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইংরেজি সর্বত্র উদযাপন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এর ব্যতিক্রম নয় বরাক উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্তে ও। উল্লেখ্য, “১৯৯৯ সালের ১৭ ই নভেম্বর
ইউনেস্কো থেকে ঘোষণা করা হয় ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে” । যা আজ ও সেই রীতি ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলছে এবং আগামীতে ও চলবে।
শ্রীভূমি জেলার শিবনগরস্থিত “আমরা বাঙালী” রাজ্য কার্যালয়ের সামনে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে গোটা বিশ্ব জুড়ে প্রতিটি ভাষা প্রেমী মানুষেরা নিজ নিজ মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য নতুন করে শপথ নেবার দিন ছিল। “আমরা বাঙালী” রাজ্য কমিটির উদ্যোগে আগরতলা সহ খোয়াই কমলপুর, কল্যাণপুর,ধর্মনগর তেলিয়ামুড়া, আমবাসা,চুড়াইবাড়ি, পানিসাগর,জুলাইবাড়ি সহ ত্রিপুরা রাজ্যের সর্বত্র যথাযোগ্য মর্যাদায় ৫২- এর এবং ১৯৬১ সালের ১৯ শে মে শিলচরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
রাজ্য কার্যালয়ের সামনে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে “আমরা বাঙালী” দলের রাজ্য সচিব গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল বলেন ৫২ -র ২১ শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে উর্দু সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সংখ্যা গরিষ্ঠ বাঙালীর মাতৃভাষা বাংলাকে অবদমন করে বল পূর্বক উর্দু চাপিয়ে দিতে চাইলে এর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে বাংলার দামাল ছেলে মেয়েরা। এই সংগ্ৰামে অবতীর্ণ হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের হানা দারিদের হাতে সালাম, বরকত রফিক জব্বার প্রাণ বিসর্জন করেছিলেন মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য।একই ভাবে ওপার বাংলার অসমে অসম সরকার বাংলা ভাষাকে কেড়ে নিতে চাইলে বরাকের বাঙালীরা এর বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলেন।এই আন্দোলন করতে গিয়ে এগারো জন শহীদ হন। তাদের প্রতিও এদিন “আমরা বাঙালী” দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। অথচ এই বাংলা ভাষাকে ধ্বংস করার জন্য এপার বাংলা ওপার বাংলায় একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আমরা দেখলাম পাশ্ববর্তী দেশ যেই দেশ ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য একটি দেশের জন্ম দিয়েছে।সেই দেশেও উর্দু বাদীদের চক্রান্তের শিকার হয়ে সেই দেশের সরকার পরিবর্তন হয়েছে। নূতন সরকার বাংলা ভাষার প্রতি কিছুটা মুখ ফিরিয়ে উর্দু চাপিয়ে দেয়ার অপকৌশল শুরু করেছে। আবার আমরা যদি আগরতলার দিকে তাকাই সেখানেও দেখি আগরতলার টাউন হলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে যে কর্মসূচি রেখেছে সেখানে দেখা যাচ্ছে যে বাংলা ভাষার প্রতি সন্মান জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। অবাক করার মতো বিষয় হলো বর্তমান হিন্দুত্ববাদী সরকার যে ফ্লেক্স টাউন হলের সামনে লাগিয়েছে সেখানে বাংলা ভাষার স্থান নেই। রাজ্যে নূতন করে যে রাস্তার নাম লিখছে সেখানেও হিন্দি কে প্রাধান্য দিচ্ছে। শুধু তাই নয় আগরতলা রেলষ্টেশনেও বাংলা ভাষায় ঘোষণা করা হয় না।খোদ পশ্চিম বঙ্গের বুকে বাংলা ভাষায় কথা বললে বাংলাদেশী হিসেবে গাল দেয় হিন্দি বলয়ের লোকেরা।আজ অতি দুঃখের সাথে বলতে হয় বাঙালী নেতা মন্ত্রীরা ক্ষমতার লোভে নিজের মাতৃভাষাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে।আজ সারা ভারতবর্ষে বাঙালী ভাস্যমান জাতিতে পরিণত হয়েছে। আজকে বাঙালী জাতিকে নাগরিকত্বের পরিচয় দিতে হচ্ছে।যে বাঙালী জাতি দেশের স্বাধীনতার জন্য সবচেয়ে বেশি আত্ম বলিদান দিল সেই জাতির আজ ভাষা সংস্কৃতি, কৃষ্টি, শিক্ষা, সাহিত্য মনীষীদের ইতিহাস সুকৌশলে মুছে ফেলা হচ্ছে। আমরা আশা করি আত্মঘাতী বাঙালী জাতি যদি তার চেতনা ফেরাতে না পারে তবে অচিরেই পরিচয় হীন জাতিতে পরিণত হবে। বিলুপ্ত হবে বাঙালি জাতি। বাঙালি ঘরের প্রতিটি মায়ের কতর্ব্য সন্তানদের নিজের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া। মাতৃভাষা বাংলার গুরুত্ব তাদের হৃদয়ে গেঁথে দেওয়া প্রতিটি মায়ের কতর্ব্য। তবে ই তো “আমরা বাঙালি” সার্থক হবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। নচেৎ এসব লোক দেখানো বছরের পর বছর চলতেই থাকবে আর একদিন বিলুপ্ত হবে বাঙালি জাতি।