হাসপাতালেও বোমা! গাজার ছয় সাংবাদিক-সহ ৮৯ জনকে নৃশংস খুনের পর ‘কুম্ভীরাশ্রু’ নেতানিয়াহুর!

সংবাদ সংস্থা, ২৭ আগস্ট :- দুর্ভিক্ষের গ্রাসে গাজা। নেই ওষুধ। ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে কুকুর-বেড়ালের মতো মরছে মানুষ। তারপরেও ক্ষান্ত দিচ্ছে না ইজরায়েলি সেনা। মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো হামলা চালাচ্ছে

আইডিএফ। সোমবার গাজার নাসের হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সেনা। এই হামলা মৃত্যু হয়েছে ছয় সাংবাদিক-সহ ৮৯ জনের। হাসপাতালে হামলার কথা জানিয়েছে প্যালেস্টাইনের স্বাস্থ্যকর্মীরা। হামাসের বিরুদ্ধে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা যুদ্ধে এবার শেষ কামড় দিতে প্রস্তুত হয়েছে ইজরায়েল সেনা।

গোটা গাজা দখলের নির্দেশ দিয়েছেন নেতানিয়াহু। সেই লক্ষ্যে শুরু হয়েছে অভিযান। দুর্ভিক্ষের কবলে চলে যাওয়া গাজায় মুহুর্মুহু বোমা বর্ষণ করা হচ্ছে। কুকুর-বেড়ালের মতো মরছে সাধারণ মানুষ। এর মাঝেই গত সোমবার গাজার নাসের হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সেনা। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬ জন

সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৮৯ জন প্যালেস্তাইন নাগরিক নিহত হয়েছেন। সোমবার গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। খবর মিডল ইস্ট মনিটরের। সোমবার গাজার একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বৈত বোমা হামলায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে পাঁচজন সাংবাদিকও রয়েছেন। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ইসরায়েলি সেনারা দখলকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লাহ, বেথলেহেম ও জেরুজালেম শহরের আশপাশে

অভিযান চালায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, এসব অভিযানে বেশ কয়েকজন তরুণকে আটক করা হয়েছে। এই হামলা মৃত্যু হয়েছে ছয় সাংবাদিক-সহ ৮৯ জনের। হাসপাতালে হামলার কথা জানিয়েছে প্যালেস্টাইনের স্বাস্থ্যকর্মীরা। প্রথমে হাসপাতালে চতুর্থতল ও পরে দ্বিতীয় তলে হামলা হয়।

এই হামলায় আল জাজিরা, রয়টর্সের ৫ জন সাংবাদিক ও চিত্র সাংবাদিকের মৃত্যু হয়। এছাড়াও মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্মী-সহ মোট ২০ জনের। কাপুরুষোচিত এই হামলার তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দার ঝড় ওঠে। এদিকে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় বোমা হামলা জোরদার করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের শেয়ার করা পৃথক প্রতিবেদনে জানা গেছে, উত্তর গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে, মধ্যাঞ্চলের

নুসেইরাত এলাকায় এবং দক্ষিণের খান ইউনুসে বসতবাড়ি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা এই অপ্রত্যাশিত এবং দুঃখজনক ঘটনার জন্য গভীরভাবে অনুতপ্ত। আমাদের লক্ষ্য ছিল হামাস সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, একটি ভুলবশত হামলায় নিরপরাধ বেসামরিক মানুষের জীবনহানি ঘটেছে।” তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমরা

সর্বদা বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। এই ঘটনাটি একটি গুরুতর ভুল ছিল, এবং আমরা এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করব।’ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, হামলায় নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী ও শিশুও রয়েছে। হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার মানুষের জন্য আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

হামাসের পক্ষ থেকে এই হামলার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে এবং তারা দাবি করেছে যে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালাচ্ছে। এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস অবিলম্বে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের মতো সুরক্ষিত স্থানে হামলা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন।’