৭ নক্ষত্রই এশিয়া কাপে বাদ! তালিকার শীর্ষে শ্রেয়স, ক্ষোভের দাবানল নেট-পাড়ায়

সংবাদ সংস্থা, ১৯ আগস্ট :- ভারতের এশিয়া কাপের স্কোয়াড দেখে চক্ষু ছানাবড়া ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের। ৭ নক্ষত্রই এশিয়া কাপ থেকে বাদ পড়লেন! ক্ষোভের দাবানলে পুড়ছে নেটপাড়া!

অজিত আগরকরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় নির্বাচক কমিটি মঙ্গলবার আসন্ন এশিয়া কাপের দল বেছে নিয়েছে। আর ১৫ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষিত হওয়ার পরেই নেটপাড়া জ্বলছে ক্ষোভের দাবানালে। ৫ নক্ষত্রকে বাদ দিয়েই হয়েছে এশিয়া কাপের দল। দেখতে গেল সাত নক্ষত্র! কীভাবে তাঁরা বাদ গেলেন এই নিয়েই চলছে তুমুল চর্চা… তালিকার শীর্ষে শ্রেয়স আইয়ার। ২০২৩ থেকে তিনি দেশের জার্সিতে ক্ষুদ্রতম সংস্করণে খেলেননি। বিগত দুই মরসুমে

শ্রেয়সের টি-টোয়েন্টি রেকর্ড চমকে দেওয়ার মতো। পঞ্জাব কিংসের হয়ে চলতি আইপিএলে প্রীতি জিন্টার দলের অধিনায়ক আলো ছড়িয়েছেন। ১৭৫.০৭-এর স্ট্রাইক রেটে ৬০৪ রান করেছিলেন ৫০.৩৩- এর গড়ে। স্পিনের বিরুদ্ধে তাঁর আধিপত্য ছিল দেখার মতো। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট এবং ঘরোয়া ক্রিকেট মিলিয়ে সোনালি দৌড়ে ছিলেন

তিনি। বিগত দু’বছরে, তিনি কলকাতা নাইট রাইডার্সকে আইপিএল খেতাব জিতিয়েছেন ২০২৪ সালে। সৈয়দ মুসতাক আলি ট্রফিতে মুম্বইকে জিতিয়েছেন। সোবো মুম্বই ফ্যালকনসকে মুম্বই টি-টোয়েন্টি লিগের ফাইনালে নিয়ে গিয়েছিলেন। এবার আইপিএলে প্রথমবার পঞ্জাবের দায়িত্ব নিয়েই ফাইনালে তুলেছেন। তাঁর সাফল্য শুধু সাদা বলের

ক্রিকেটেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ২০২৩-২৪ সালে মুম্বইয়ের রঞ্জি ট্রফি জয়ের অংশ ছিলেন। তারপরে ইরানি কাপ জিতেছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে ভারতকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতাতেও রেখেছেন অবদান। মিডল অর্ডারের আগুনে ব্যাটার হয়েও কীভাবে শ্রেয়সকে গৌতম গম্ভীর বাদ দিতে পারেন, তা বুঝতেই পারছেন না সমর্থকরা।

আইয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টিআই ইনিংস ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বেঙ্গালুরুতে। কঠিন পরিস্থিতিতে ৫৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন তিনি। আগরকর বলেন, ‘দেখুন দলে জায়গা না পাওয়ায় শ্রেয়সের কোনও দোষ নেই। আমাকে বলুন যে, ও কার জায়গায় আসবে? এই মুহূর্তে ওকে সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

আরেকজন উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়- তরুণ ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল। তিনি ভারতের হয়ে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী দলের অংশ ছিলেন রিজার্ভ ওপেনার হিসেবে। এবং চলতি বছর আইপিএলে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। ৪৩-এর গড়ে এবং ১৫৯.৭১ স্ট্রাইক রেটে ৫৫৯ রান করে, দলের সর্বাধিক রানশিকারি হয়েছিলেন। ফর্মের

কারণে মূল স্কোয়াডে তাঁর অনুপস্থিতি বিশেষ ভাবে অবাক করেছে। তবে তাঁকে স্ট্যান্ডবাই তালিকায় রাখা হয়েছে। সম্প্রতি ইংল্যান্ডে যশস্বী ১০ ইনিংসে ২টি সেঞ্চুরি-সহ ৪১১ রান করেছিলেন। ‘যশস্বীর দলে সুযোগ না পাওয়া দুর্ভাগ্যজনক। তবে বিগত এক বছর ধরে অভিষেক যা করেছে, তা মাথায় রাখতেই হয়েছে। আর ও আমাদের বোলিং

করার বিকল্পও দিয়েছে, যা আমাদের ভীষণ ভাবে প্রয়োজন ছিস। ফলে ওদের মধ্যে একজনকে বাদ পড়তেই হত।’ অলরাউন্ডার ওয়াশিংটন সুন্দরের বাদ পড়া নিয়েও চর্চা চলছে। কার্যকর অফ-স্পিন এবং নির্ভরযোগ্য ব্যাটিংয়ের মিশেল তিনি। দলের ভারসাম্যের জন্য ওয়াশিংটনকে বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট

সিরিজে তাঁর সাম্প্রতিক দুর্দান্ত ফর্ম এবং অলরাউন্ড দক্ষতাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে। যার ফলে টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে তাঁর অনুপস্থিতি বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত হয়ে উঠেছে। তাঁকে স্ট্যান্ডবাই হিসেবে রাখা হয়েছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের সাম্প্রতিক টেস্ট সিরিজ নায়ক ছিলে মহম্মদ সিরাজ। তিনিও বাদ। এবার আইপিএলে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন সিরাজ। জসপ্রীত বুমরার সঙ্গে দুর্দান্ত জুটি গড়ে তোলার ক্ষমতা রাখা সিরাজ দলের বড় সম্পদ হতে পারতেন। আইপিএলের সর্বশেষ আসরে ২৫ উইকেট নিয়ে পার্পল ক্যাপ জেতা পেসার ছিলেন প্রসিধ কৃষ্ণা। তিনিও

মূল দলে জায়গা পাননি। ঘরোয়া মরসুমে তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স কথা বলেছে। এবং তিনি আইপিএল দলের বোলিং বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন। এত কিছুর পরেও সুন্দর এবং জয়সওয়ালের মতো তাঁকেও স্ট্যান্ডবাই তালিকায় রাখা হয়েছে। ২০২৫ আইপিএলের সর্বাধিক রানশিকারি সাই সুদর্শনও এশিয়া কাপের দলে জায়গা পাননি। একটি সেঞ্চুরি এবং ছ’টি হাফ-সেঞ্চুরি নিয়ে ৭৫৯ রান করেছিলেন, পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দুর্দান্ত ধারাবাহিকতা সকলকে মোহিত করেছিল। তরুণ লেগ-স্পিনার রবি বিষ্ণোই, যিনি সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি দলে নিয়মিত ছিলেন, তাঁকে এশিয়া কাপের জন্য দলে নেওয়া হয়নি। মাঝের ওভার গুলিতে উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা অতীতে মূল্যবান ছিল। তবে নির্বাচকরা কুলদীপ যাদব এবং বরুণ চক্রবর্তীকে বেছে নিয়েছেন তাঁর জায়গায়। সূর্যকুমার যাদব (অধিনায়ক), শুভমন গিল (সহ-অধিনায়ক), অভিষেক শর্মা, তিলক ভার্মা, হার্দিক পাণ্ডিয়া, শিবম দুবে, অক্ষর প্যাটেল, জিতেশ শর্মা (উইকেটরক্ষক), জসপ্রীত বুমরা, অর্শদীপ সিং, বরুণ চক্রবর্তী, কুলদীপ যাদব, সঞ্জু স্যামসন (উইকেটরক্ষক), হর্ষিত রানা ও রিঙ্কু সিং। স্ট্যান্ডবাই- প্রসিধ কৃষ্ণা, ওয়াশিংটন সুন্দর, রিয়ান পরাগ, ধ্রুব জুরেল ও যশস্বী জয়সওয়াল প্রমুখ।