কলিকালের ঠগিনী! ফাঁদে ফেলে ৮ বিয়ে, একটা দুটা নয়, লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নবম বিয়ে করতে গিয়েই জালে আটকা পড়ে

সংবাদ সংস্থা, ০২ আগষ্ট :- পেশায় স্কুলশিক্ষিকা। তবে বাড়তি আয়ের উৎস ছিল বিয়ে! আট স্বামীকে আর্থিক প্রতারণা করার পরে নবম বার ছাঁদনাতলায় বসার তোড়জোড় করছিলেন মহারাষ্ট্রের নাগপুরের সমীরা ফতিমা। তার আগেই গ্রেফতার ‘লুটেরি দুলহন’। অভিযোগ, আট জন স্বামীকে ব্ল্যাকমেইল করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়েছে নাগপুরের ‘ঠগিনী’। কলিকালের ঠগিনী সেই ফতিমা! ফাঁদে ফেলে ৮ বিয়ে, লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নবম বিয়ে করতে গিয়েই লুটেরা দুলহান শিক্ষিকার খুলে গেল আসল পর্দা।

‘ঠগিনী’ বাংলা ছবিতে নায়িকা একের পর এক বিয়ে করতেন। ফুলশয্যার রাতে স্বামীর সর্বস্ব লুট করে পালাতেন। তাঁকে সাহায্য করতেন অন্য একজন। ফতিমাও একেবারে ওই ভাবে ছকে চলতেন। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর একটি দল ছিল। তাঁরা পাত্র দেখতেন। তাঁদের সঙ্গে ফেসবুক এবং ঘটকালির অ্যাপে ভাব জমাতেন ফতিমা। বিয়ে হলেই স্বামীর টাকাকড়ি হাতিয়ে পালাতেন। তার পর চলত নানা রকম ভাবে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়। ফতিমার নবম ‘বিবাহ অভিযান’ সফল হতে দেয়নি পুলিস।

পুলিস সূত্রে খবর, ফতিমা উচ্চশিক্ষিতা। একটি স্কুলে শিক্ষকতাও করেন। গত ১৫ বছর ধরে তিনি একের পর এক বিয়ে করেছেন এবং প্রত্যেক স্বামীকে প্রতারণা করেছেন। প্রথম দিকে লোকলজ্জা এবং সামাজিক সম্মান নষ্টের ভয়ে ওই যুবকদের কেউ পুলিশে অভিযোগ করেননি। তবে সম্প্রতি দু’জন পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এক জনের অভিযোগ, নিজের ইচ্ছায় তাঁকে ছেড়ে গিয়েছেন ফতিমা। তার পর বিভিন্ন ভাবে ব্ল্যাকমেইল করে ৫০ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। অপর জনের অভিযোগ, তাঁর কাছ থেকে এ পর্যন্ত ১৫ লক্ষ টাকা নিয়েছেন প্রাক্তন স্ত্রী।

এই নারী তার স্বামীদের ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করাই লক্ষ্য ছিল। পুলিস একটি মামলা নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করেছে। জানা গেছে, সমীরা ফাতিমা একটি চক্রের সঙ্গে মিলে এই প্রতারণা চালাতো। অভিযুক্ত সমীরা একজন শিক্ষিকা এবং শিক্ষিত নারী। পুলিস ধারণা করছে, গত ১৫ বছর ধরে সে এই ধরনের প্রতারণা করে আসছে, এবং ধনী, বিবাহিত মুসলিম পুরুষদের টার্গেট করতো সে।

এক অসহায় স্বামীর অভিযোগ অনুযায়ী, সমীরা একজন তথাকথিত স্বামীর কাছ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা এবং অন্যজনের কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা নগদ এবং ব্যাঙ্ক ট্রান্সফারের মাধ্যমে আরও অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমনকি সে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) কিছু উচ্চপদস্থ কর্মীর সঙ্গেও একই ধরনের প্রতারণা করেছে বলে জানা গেছে।

তদন্তে আরও কিছু সামনে এসেছে যে, সমীরা তার শিকারদের খুঁজে বের করতে ম্যাট্রিমোনিয়াল ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক ব্যবহার করতো। সে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ কলের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করত এবং নিজের জীবন সম্পর্কে দুঃখের গল্প শোনাত। নিজেকে একজন অসহায়, ডিভোর্সি নারী এবং একটি সন্তানের মা হিসেবে পরিচয় দিয়ে সে সহানুভূতি ও বিশ্বাস অর্জন করত। এর আগে একবার সে গর্ভবতী হওয়ার মিথ্যা দাবি করে গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হয়েছিল। তবে, অবশেষে ২৯শে জুলাই নাগপুরের একটি চায়ের দোকান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ফতিমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, মূলত বর্ধিষ্ণু এবং সুপ্রতিষ্ঠিত মুসলমান যুবকরাই ছিল তাঁর ‘টার্গেট’। তিনি ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেছেন। বিয়ে করেছেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিককেও। তাঁদের প্রত্যেককে কোনও না কোনও ভাবে ঠকিয়ে টাকা আদায় করে আবার বিয়ে করেছেন। এক তদন্তকারীর কথায়, “ফতিমা” নামে ওই মহিলা ঘটকালির ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্ট খুলে ভাব জমাতেন যুবকদের সঙ্গে। কিছু দিন কথাবার্তার পরে হোয়াট্‌সঅ্যাপে নম্বর আদান-প্রদান করতেন। যুবকদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়েও করতেন।

কলিকালের এই ঠগিনি মহিলা সমাজকে লজ্জিত করার মতো পদক্ষেপ বললেও ভুল হবে তাই সচেতন মহল উপযুক্ত শাস্তি ই দাবী করেন এই ঠগিনীর বিরুদ্ধে।