ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীল বিকাশ, সাংস্কৃতিক জাগরণ এবং শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখল অসম সরকার ও জেলা প্রশাসনের যুগ্ম প্রয়াস
জনসংযোগ শিলচর, ২৭ জুলাই :- কাছাড় জেলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ১৪টি প্রতিষ্ঠানে একযোগে সফলভাবে আয়োজিত হলো ‘গ্রীষ্মকালীন সাংস্কৃতিক কর্মশালা ২০২৫’। অসম সরকারের সাংস্কৃতিক বিষয়ক বিভাগ এবং কাছাড় জেলা প্রশাসনের যৌথ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই গ্রীষ্মকালীন কর্মশালাটি ২৬ জুলাই, শনিবার, এক গৌরবময় সমাপ্তি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিসমাপ্ত হয়। কর্মশালাটি গত ১১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ১৫ দিনব্যাপী জেলাব্যাপী সাংস্কৃতিক এবং শারীরিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত করে, যাতে শতাধিক বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী অংশগ্রহণ করে।

এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল ছাত্র-ছাত্রীদের অবকাশের সময়কালকে ফলপ্রসূভাবে কাজে লাগিয়ে তাদের মধ্যে সৃজনশীলতা, শারীরিক স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সংস্কৃতিচর্চার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা। কর্মশালার আওতায় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় নৃত্য (আধুনিক ও লোক), সংগীত (বাঙলা ও অসমীয়া), আবৃত্তি, নাটক, যোগব্যায়াম, আত্মরক্ষার প্রাথমিক কৌশল প্রভৃতি ক্ষেত্রে। প্রতিটি ভেন্যুতে স্থানীয় বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, প্রশিক্ষক এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মাধ্যমে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

লক্ষীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের জগাই মথুরা উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়োজিত সমাপ্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য, গণবণ্টন ও ভোক্তা বিষয়ক, বরাক উপত্যকা উন্নয়ন, খনিজ ও খনিজ সম্পদ দপ্তরের মন্ত্রী কৌশিক রায়। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “এই কর্মশালা কেবলমাত্র একটি সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নয়, বরং এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক ও সামাজিক বিকাশের এক সজীব প্রতিফলন। অসম সরকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রতিভা বিকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তিনি কর্মশালার সফল বাস্তবায়নের জন্য আয়োজক কমিটি, শিক্ষক ও অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনন্দন জানান।
লক্ষীপুরের অনুষ্ঠানে সহ-আয়োজক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন, লখিপুর শাখা। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে প্রশংসাপত্র বিতরণ এবং তাঁদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে উদযাপন হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত ও হৃদয়গ্রাহী।

অন্যদিকে, উধারবন্দ বিধানসভা কেন্দ্রের কাশিপুর বল্লভভাই প্যাটেল বিদ্যালয় ও DIET সেন্টারে আয়োজিত সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক মিহির কান্তি সোম। তিনি বলেন, “আমাদের যুবসমাজের মাঝে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধরনের কর্মসূচি তাদের সেই সম্ভাবনাকে বিকশিত করতে সহায়তা করে। সরকারের এই উদ্যোগ শুধু প্রতিভা বিকাশ নয়, আত্মবিশ্বাস ও নেতৃত্বের গুণাবলি গঠনের এক অনন্য মাধ্যম।” বিধায়ক মহাশয় শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদের ভূমিকাকে ‘অমূল্য’ বলে অভিহিত করেন এবং ভবিষ্যতে এই কর্মশালার মতো কার্যক্রম বিদ্যালয়স্তরে সারা বছর ধরে সহশিক্ষামূলকভাবে চালু রাখার আহ্বান জানান।
জেলার বিভিন্ন শহরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত ভেন্যুগুলিতে কর্মশালার কার্যক্রমে ছিল অভিভাবকদের সক্রিয় উপস্থিতি ও সামাজিক সম্পৃক্ততা। বহু অভিভাবক এই উদ্যোগকে শিশুর সামগ্রিক বিকাশে অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মতপ্রকাশ করেন।

এই কর্মসূচির সার্বিক পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দেন কাছাড়ের জেলা আয়ুক্ত মৃদুল যাদব, (আইএএস)। তিনি বলেন, “সাংস্কৃতিক সচেতনতামূলক কর্মসূচির মধ্যে এটি কাছাড় জেলায় অন্যতম বৃহৎ ও সমন্বিত উদ্যোগ। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি ভেন্যুতে প্রশিক্ষক নিয়োগ, সরঞ্জাম সরবরাহ, বিদ্যালয়গুলির সঙ্গে সমন্বয় সাধন ইত্যাদি বিষয় সুচারুভাবে পরিচালিত হয়েছে। স্থানীয় বিদ্যালয়গুলিও পরিকাঠামো প্রদানে অনন্য ভূমিকা পালন করেছে।”

এই কর্মশালাটি কেবল একটি গ্রীষ্মকালীন প্রশিক্ষণই নয়, বরং একে দেখা হচ্ছে সমাজভিত্তিক সাংস্কৃতিক শিক্ষা অভিযানের এক সফল দৃষ্টান্ত হিসেবে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যকার শৃঙ্খলা, দলগত চেতনা, সৃজনশীলতা ও সংস্কৃতিমূলক ঐক্য গঠনে এই কর্মসূচি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।
সমাপ্তি অনুষ্ঠানের শেষ লগ্নে করতালির ধ্বনি ও হাসিমুখে ভরে উঠেছিল প্রতিটি অনুষ্ঠানস্থল। প্রশিক্ষক, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক এবং সমাজের নানা স্তরের মানুষের সহযোগিতায় এই কর্মসূচি এক সফল সাংস্কৃতিক অভিযানে পরিণত হয়েছে। আশা করা যায়, আগামীতে এই ধারা অব্যাহত রেখে বরাক উপত্যকার সাংস্কৃতিক অগ্রগতিকে আরও মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো সম্ভব হবে।