ট্রাম্পের খামখেয়ালে আমেরিকায় H1B ভিসার চাকুরেরা বিপন্ন! নিয়মে বড় বদলের জেরে ফিরতে হবে ভারতীয়দের স্বদেশে

সংবাদ সংস্থা, ১৪ আগস্ট :- আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লটারি-ভিত্তিক H-1B ভিসা নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনার প্রস্তুতি নিয়েছে। একটি প্রতিবেদন অনুসারে, হোয়াইট হাউসের অফিস অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স (WHOIRA) একটি প্রস্তাবিত নিয়মের অনুমোদন দিয়েছে বিদেশি কর্মীদের H-1B ভিসা বণ্টনের পদ্ধতিকে নতুনভাবে তৈরি করা হবে।

ট্রাম্পের নতুন H-1B ভিসার নিয়ম ভারতীয়দের জন্য বিপদ ডেকে আনছে! যারা সদ্য কোন কোম্পানিতে যুক্ত হয়েছে অর্থাত্‍ কম মাইনের চাকুরী নিয়ে বিদেশে আছেন, যারা কো এন্ট্রি-লেভেলের চাকরি করছেন- তাঁরা চাকরি হারানোর বা আমেরিকায় না থাকার ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। ভারত থেকে আমেরিকায় চাকরি করতে আসার ক্ষেত্রে, ভিসা অগ্রাধিকার পাবে তারাই, যাদের বাত্‍সরিক আয় বেশি (CTC) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লটারি-ভিত্তিক H-1B ভিসা নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনার প্রস্তুতি নিয়েছে।একটি প্রতিবেদন অনুসারে, হোয়াইট হাউসের অফিস অফ ইনফরমেশন অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স (WHOIRA) একটি প্রস্তাবিত নিয়মের অনুমোদন দিয়েছে বিদেশি কর্মীদের H-1B ভিসা বণ্টনের পদ্ধতিকে নতুনভাবে তৈরি হবে। আশা করা হচ্ছে, এই নিয়মটি শিগগিরই জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নতুন এই মজুরি-ভিত্তিক নিয়মটি আন্তর্জাতিক আবেদনকারীদের, বিশেষ করে ভারতীয়দের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। কারণ, এন্ট্রি-লেভেলের এবং কম বেতনের চাকরিরত ছেলেমেয়েরা এই ভিসা নাও পেতে পারে। বেতনের ভিত্তিতে ভিসা:

প্রস্তাব অনুযায়ী, ভিসা আবেদনকারীদের তাদের চাকরির আবেদনে প্রস্তাবিত বেতনের ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যে পদগুলোতে বেশি বেতন দেওয়া হয়, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে। এর মূল উদ্দেশ্য হল মার্কিন কর্মীদের সুরক্ষা দেওয়া এবং নিশ্চিত করা যে ভিসাগুলো এমন পদগুলোতে যাচ্ছে যা আমেরিকান অর্থনীতির জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে লাভজনক।

H-1B প্রোগ্রামের বার্ষিক সীমা ৮৫,০০০ ভিসা, যা লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়। ২০২১ সালে, ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (DHS) লটারির পরিবর্তে একটি চার-স্তরীয় মজুরি-ভিত্তিক পদ্ধতির প্রস্তাব করেছিল। এই পদ্ধতিটি প্রথম ট্রাম্প প্রশাসন ‘বাই আমেরিকান, হায়ার আমেরিকান’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে চালু হয়েছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল উচ্চ বেতনের, উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন বিদেশি কর্মীদের পক্ষে কাজ করা। মূল বিষয়বস্তু:

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রবর্তিত নতুন H-1B ভিসা নীতি ভারতীয় পেশাদারদের, বিশেষ করে এন্ট্রি-লেভেল (entry-level) পদে থাকা কর্মীদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।

মজুরি-ভিত্তিক নীতি (Wage-based policy): নতুন নিয়মটি H-1B ভিসার আবেদনকারীদের মজুরির উপর বেশি জোর দেয়। অর্থাৎ, যে সকল আবেদনকারীর বেতন বেশি, তাদের ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।

ভারতীয়দের উপর প্রভাব: যেহেতু অনেক ভারতীয় তথ্য প্রযুক্তি (IT) পেশাদার, বিশেষত যারা সদ্য স্নাতক হয়েছেন, তারা তুলনামূলকভাবে কম বেতনে তাদের কর্মজীবন শুরু করেন, এই নিয়ম তাদের জন্য ভিসা পাওয়া কঠিন করে তোলে।

ঝুঁকিপূর্ণ এন্ট্রি-লেভেল চাকরি (Risky entry-level jobs): এই নীতির কারণে, এন্ট্রি-লেভেলের পদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করতে চাওয়া ভারতীয়দের জন্য ভিসা পাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এর ফলে, অভিজ্ঞ ও উচ্চ বেতনের কর্মীদের জন্য সুযোগ বাড়লেও, নতুনদের জন্য সুযোগ সংকুচিত হতে পারে।

মূলত, এই নীতিটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল যাতে মার্কিন কোম্পানিগুলো বিদেশি কর্মীদের কম বেতনে নিয়োগ না করে, কিন্তু এর ফলে ভারতীয় এন্ট্রি-লেভেলের কর্মীদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মজীবনের সুযোগ কমে আসে।

ভিসা ইতিহাস :-

মজুরি-ভিত্তিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাগুলো আইনি এবং জন প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল। সমালোচকরা সতর্ক করেছিলেন যে এই পদ্ধতিটি বিদেশি কর্মীদের, বিশেষ করে সদ্য স্নাতকদের নিয়োগের হার মারাত্মকভাবে হ্রাস করতে পারে। এর ফলে বাইডেন প্রশাসন ২০২১ সালে সেই পরিকল্পনা প্রত্যাহার করে নেয়। ফেডারেল কোর্টগুলোও এর আগে যোগ্য পেশার তালিকা সংকুচিত করা এবং মজুরির প্রয়োজনীয়তা বাড়ানোর প্রচেষ্টাগুলো আটকে দিয়েছিল।

স্নাতক এবং নিয়োগকর্তাদের উপর প্রভাব :-

যদি এই নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হয়, তবে সদ্য স্নাতক এবং এন্ট্রি-লেভেলের কর্মীদের জন্য এটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, কারণ তাদের পক্ষে শুরুতে উচ্চ বেতন নিশ্চিত করা কঠিন হতে পারে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এটি তাদের কর্মজীবনের শুরুতেই উচ্চ বেতন নিয়ে আলোচনা করার চাপ বাড়িয়ে দেবে, যা সাধারণত ব্যাপক অভিজ্ঞতা বা নেটওয়ার্ক ছাড়া একটি কঠিন কাজ।

নিয়োগকর্তারা, বিশেষ করে ছোট কোম্পানি, স্টার্টআপ এবং অলাভজনক সংস্থাগুলো, জুনিয়র পদের জন্য উচ্চ মজুরির সীমা পূরণ করতে হিমশিম খেতে পারে, যা আন্তর্জাতিক কর্মীদের স্পন্সরশিপের সুযোগ কমিয়ে দেবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে কাজ করতে ইচ্ছুক বিদেশি স্নাতকদের জন্য চাকরির সুযোগ সীমিত হতে পারে।