শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় রাজীব ভবনে নির্বাচিত হলেন কংকন নারায়ণ সিকিদার ও দেবজ্যোতি বাউরী
জনসংযোগ শিলচর, ০৬ আগস্ট :- আজ বিকেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে গঠিত হয় কাছাড় জেলা পরিষদ বোর্ড। পঞ্চম বারের মতো বোর্ড গঠন হলো শান্তিপূর্ণ ভাবে। ১০০০-রও বেশি মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে ঐতিহাসিক সাক্ষী পঞ্চম বারের মতো গঠিত জিলা পরিষদ বোর্ড।

কাছাড় জেলার স্থানীয় স্ব-শাসন ও গ্রামীণ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হল বুধবার, শিলচরের রাজীব ভবনে, যখন গঠিত হল পঞ্চম কাছাড় জিলা পরিষদ বোর্ড। জেলা আয়ুক্ত, মৃদুল যাদব, (আইএএস)এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং জিলা পরিষদের মুখ্য কার্যর্বাহী আধিকারিক প্রণব কুমার বরা, (এসিএস)এর প্রশাসনিক পরিচালনায় সুশৃঙ্খল ও গম্ভীর পরিবেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সম্পূর্ণ নির্বাচনটি নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যা জেলা প্রশাসনের পেশাদারিত্বের উজ্জ্বল প্রমাণ।

এই বিশেষ অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতা, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, জেলা প্রশাসনের আধিকারিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী, এবং সাধারণ জনগণ সহ এক হাজারেরও বেশি মানুষ অংশ নেন। উপস্থিত বিশাল জনসমাগমে গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণের প্রমাণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এই বৃহৎ উপস্থিতি অনুষ্ঠানটিকে এক উজ্জ্বল ও জনমুখী রূপ প্রদান করে।
নির্বাচনের ফলাফলে কংকন নারায়ণ সিকিদার জিলা পরিষদের সভাপতি এবং দেবজ্যোতি বাউরী উপ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। মোট ২৫ জন নির্বাচিত জিলা পরিষদ সদস্যের মধ্যে বিজেপি-সমর্থিত প্রার্থীরা ১৭টি ভোট লাভ করেন, যেখানে কংগ্রেস সমর্থিত প্রার্থীরা পান ৮টি ভোট। এক কংগ্রেস সদস্য বিজেপি প্রার্থীকে সমর্থন জানানোয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা স্পষ্ট হয়। নির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি হয় অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশে, যেখানে প্রশাসনিক আধিকারিক, নির্বাচিত প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট অতিথিগণ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানের মুখ্য অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অসম সরকারের খাদ্য, গণবণ্টন ও গ্ৰাহক বিষয়ক, খনিজসম্পদ, এবং বরাক উপত্যকা উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী কৌশিক রাই। তিনি নতুনভাবে নির্বাচিত সভাপতি, উপ-সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান এবং আহ্বান জানান তাঁরা যেন আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে গ্রামীণ কাছারের উন্নয়নের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দেন। তিনি বলেন, “মানুষ প্রতিশ্রুতি নয়, উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছে” এবং সেই আস্থা রক্ষা করার দায়িত্ব এখন নতুন বোর্ডের ওপর। মন্ত্রী রাই নতুন বোর্ডকে পঞ্চায়েত, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির সঙ্গে সু-সমন্বয় রেখে পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানীয় জল, স্যানিটেশন এবং জীবিকা সংস্থানের ক্ষেত্রে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জিলা পরিষদ হোক সরকারের নীতি ও সাধারণ মানুষের প্রয়োজনের মধ্যে সংযোগকারী সেতু। সততা, স্বচ্ছতা ও জনসেবার মানসিকতা নিয়ে যেন এই রূপান্তর যাত্রা বজায় থাকে।
মন্ত্রী আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ড° হিমন্ত বিশ্ব শর্মার দূরদর্শী নেতৃত্বে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে যাতে প্রকৃত অর্থে মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যায়। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার জন্য তিনি জেলা প্রশাসনের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং নতুন নেতৃত্বের প্রতি স্বচ্ছতা ও সার্বজনীন উন্নয়নের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

জেলা আয়ুক্ত, মৃদুল যাদব, যিনি নির্বাচনী কার্যক্রমের সভাপতিত্ব করেন, তিনি নবনির্বাচিত সদস্যদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, জিলা পরিষদ পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থার শীর্ষস্তর এবং এর সদস্যদের দায়িত্ব অসংখ্য গ্রামের উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাঁদের নিষ্ঠা ও সক্রিয়তা সরাসরি গ্রামীণ জনজীবনের মানোন্নয়নের ওপর প্রভাব ফেলবে। তিনি সুশাসনের স্বার্থে নিয়মিত সমন্বয় সভা, কার্যক্রমের বাস্তব পর্যবেক্ষণ এবং পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার আহ্বান জানান। শান্তিপূর্ণ ও সফল নির্বাচন পরিচালনার জন্য তিনি সকল অংশগ্রহণকারীর সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্য কার্যর্বাহী আধিকারিক শ্রী প্রণব কুমার বরা স্বাগত ভাষণ দেন এবং জিলা পরিষদ গঠনের আইনানুগ কাঠামো ও দায়িত্বগুলি ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, এটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প কার্যকর হয়। গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ রক্ষায় সদস্যদের নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বানও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী,উধারবন্দের বিধায়ক মিহির কান্তি সোম ,বড়খলার বিধায়ক, মিছবাহুল ইসলাম লস্কর,কাটিগড়ার বিধায়ক, খলিল উদ্দিন মজুমদার ও ধলাই সমষ্টির বিধায়ক, নিহার রঞ্জন দাস; কাছাড় জেলা বিজেপি সভাপতি রূপম সাহা, বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি অমিতাভ রাই কংগ্রেস জেলা সভাপতি সজল আচার্য, জেলা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকগণ, বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি যে সংযত, শান্তিপূর্ণ এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, তা কাছাড় জেলা প্রশাসনের গণতান্ত্রিক মানসিকতা ও দক্ষ পরিচালনার প্রমাণ বহন করে। নবগঠিত এই জিলা পরিষদ বোর্ড আগামী দিনে গ্রামীণ কাছাড় জেলাজুড়ে এক শক্তিশালী ও কার্যকর বিকাশের দিশা দেবে, এটাই এখন সকলের প্রত্যাশা।

সবমিলিয়ে এক আনন্দময় ঐতিহাসিক সাক্ষীর সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে কাছাড় জেলা পরিষদ বোর্ড গঠন।