পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাসঙ্গিক কিছু কথা….

সবুজ গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা চোখজুড়ানো পরিবেশ এখন আর সহসা উদ্ভাসিত হয় না। জন বিস্ফোরণের ফলে অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যার চাপে বাসস্থান বাড়লেও ভূমির পরিমাণ তো বাড়ছে না। সবুজভূমির পরিমাণ তাই কমছে বাসস্থানে,আধুনিক যান্ত্রিক সভ‍্যতার অন‍্যান‍্য উপকরণে। সবুজ সমৃদ্ধ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের হিসাবে হাতে গোনার মত। “GOD MADE THE VILLAGE BUT MEN MADE THE TOWN”- এই কথাটি হয়তো আমাদের স্মৃতির আঙিনায় আর নেই। আর তা না হলে প্রকৃতির ওপর এত অত‍্যাচার অবিচার কেন?

যান্ত্রিক সভ‍্যতায় আমরা অভ‍্যস্ত হয়ে প্রকৃতির দানকে বেমালুম ভূলে যেতে বসেছি। নির্বিচারে বৃক্ষছেদন করে বাড়িয়ে দিচ্ছি পৃথিবীর উষ্ণতাকে। কীট- পতঙ্গ,পশু-পক্ষীকে কারণে অকারণে প্রাণে মেরে পরিবেশের ভারসাম্যতাকে বিনষ্ট করছি। অপরিমিত কলকারখানা র তরল বর্জ‍্যপদার্থ,মরা জীবজন্তু নদ নদীতে নির্গত করে জলকে দূষিত করছি,চুপিসাড়ে মেরে ফেলেছি -মাছ সহ অন‍্যান‍্য জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলকে। জল দূষিত করছি। এরই প্রেক্ষিতে জলের ওপর নাম জীবন সংকটাপন্ন হয়েছে। জলপানে বেড়েছে বিভিন্ন জটিল রোগীর আশঙ্কা।
যানবাহন ও কলকারখানা থেকে উদ্ভুত গ‍্যাসীয় বর্জ‍্যপদার্থ বিষিয়ে তুলেছে বায়ুমন্ডলকে। গাড়ির ধোঁয়া ও কারখানার চিমনি থেকে নির্গত অতিরিক্ত পরিমাণে সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড,কার্বন মনো অক্সাইড ইত্যাদি মানব জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনছে। বিষাক্ত বায়ুমন্ডলের প্রভাবে চিরসবুজ গাছ-গাছড়ার পাতা দূষণপ্রবণ এলাকায় ধীরে ধীরে হলদে হয়ে যাচ্ছে। শ্বাস প্রশ্বাস নিতে ভারী বোধ হচ্ছে। বেড়েছে শ্বাস কষ্ট, হাঁফানি,এলার্জি, স্নায়ুতন্ত্র ও ফুসফুস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।



দিনের বেলায় ৪৫ ডেসিবেল এবং রাতেরবেলায় ৫৫ ডেসিবেলের বেশিমাত্রার শব্দ স্বাস্থ্য সম্মত নয়। কিন্তু এর থেকে অনেক বেশিমাত্রার শব্দ আমাদের শ্রবণযন্ত্রকে প্রায়শঃ আঘাত করছে। কিছু আতশবাজির শব্দও ৬৫ ডেসিবেলের ওপর আকছার ওঠছে। ফলস্বরূপ নগরজীবনে রক্তচাপ,হৃদরোগ,মানসিক ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অজ্ঞাতর বশে মাটি মাত্রা তিরিক্ত অজৈব সার ও কিটনাশক প্রয়োগ করে প্রদত্ত উর্বরা শক্তি কে নষ্ট করছি। চরম ক্ষতিকে আলিঙ্গন করছি বৈ কি?

ভূমিতে যত্রতত্র প্লাস্টিক /পলিথিন জাতীয় সামগ্রী ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে মাটির স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব‍্যাহত করছি। হাসপাতাল,নার্সিংহোম ইত্যাদির নোংরা আবর্জনা মাটিতে নিক্ষেপ করার ফলেও মারাত্মকভাবে ভূমিদূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাটি দূষণের ফলে কুয়োর জলে মিলছে আর্সেনিক,মার্কারি ইত্যাদি ইত্যাদি যা কখনো পানের উপযোগী হতে পারে না।


সুতরাং, এবার আমাদের সজল হবার সময় হয়েছে। যাতে ভূমিদূষণ, জলদূষণ,শব্দদূষণ ও বায়ুদূষণ হতে না পারে সে ব‍্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। তবে একটা কথা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, একমাত্র বৃক্ষরোপণই পরিবেশের যাবতীয় দূষণকে রোধ করতে পারে। একটা গাছ কাটলে অন্তত দশটা গাছ লাগানোর সংকল্প গ্রহণ করতে হবে।
গাছপালা ধ্বংসের জন‍্যেই পরিবেশের স্বাভাবিকতার মূলোৎপাটন হচ্ছে। অতি বৃষ্টি ও অতি খরা হচ্ছে – আমরা যে বায়ুরাশির মধ্যে সঞ্চরণ করছি,পৃথিবীকে ঘিরে যে বায়ু রাশি আছে,যে বায়ুরাশি একটু একটু নড়লেই ঝড় হয়। সেই বায়ুরাশির মধ্যে উভয় বায়ুই বতর্মান। এক নম্বরের বায়ু যথেষ্ট পরিমাণে আছে। দুই নম্বরের বায়ু যে অল্প পরিমানে আছে তাতেই গাছপালার জীবন রক্ষা হয়। অধিকাংশ গাছ শতসহস্র সবুজ পাতা বিছিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।মানুষ, পশু,পক্ষি খাদ‍্যসামগ্রী উদরস্থ করে। পাতা হলো উদর। গাছের বৃদ্ধির জন‍্য সূর্য কিরণ অবশ‍্যক। গাছের জীবন এটা আমরা জানি।মানুষ,পশু ও পাখির মতো গাছও জীবন্ত। তাই “গাছ বাঁচান প্রাণ বাঁচান”। অক্সিজেন সংকট নিরসনে মানববন্ধন অটুট রাখতে গাছের অবদান অনস্বীকার্য।তাই সংকল্পবদ্ধ হয়ে ১টি গাছ কাটার আগে ১০টি গাছ লাগান। এই হোক জীবনের মন্ত্র , বাঁচা বাড়ার পন্থা।