চার (৪) কোটি ভক্ত সমাগমের টার্গেট নেওয়া হলেও মাত্রা দাঁড়ায় প্রায় ১০ কোটিতে, তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছে প্রশাসনিক ব্যবস্থার মান নিয়ে
সন্দীপ্ত হালদার, প্রয়াগরাজ,২৯ জানুয়ারি: মৌনী অমাবস্যা উপলক্ষে বুধবার মহাকুম্ভে ‘অমৃত স্নান’ ছিল। সেই উপলক্ষে ভোররাত থেকেই ভিড় উপচে পড়ে। আর তাতেই বিপত্তি বাঁধে। ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলিতে পদপিষ্ট হন বহু মানুষ। এই খবরটি রাতারাতি স্যোশেয়েল মিডিয়ায় চাউর হয়ে যায়।পরিবার, আত্মীয়স্বজন যাঁরা একজোটে পুণ্যস্নান করতে এসেছিলেন, পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন তাঁরা। মাইকিং করে নাম ধরে ধরে ঘোষণা হচ্ছে, যাতে পরিজনদের খোঁজ পান পুণ্যার্থীরা। প্রিয়জনের খোঁজে হাসপাতালের মর্গের বাইরেও জমা হচ্ছেন মানুষজন। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই ২ কোটি ৭৮ লক্ষ মানুষ ইতিমধ্যেই ‘অমৃত স্নান’ করে ফেলেছেন। ৮ থেকে ১০ লক্ষ মানুষের আজ ‘অমৃত স্নানে’ অংশ নেওয়ার কথা ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ভোররাত ২.৩০টে থেকেই ‘অমৃত স্নানে’র জন্য ভিড় উপচে পড়ে সঙ্গম ঘাটে। তার মধ্যেই আচমকা ধাক্কাধাক্কি, ঠেলাঠেলি শুরু হয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ভিড়ের মধ্যে মাথায় মালপত্র নিয়েও ছিলেন অনেকে। কিন্তু কোন ঘাটে স্নান করবেন, স্নান করে কোথায় যাবেন, কিছুই বুঝতে পারছিলেন না পুণ্যার্থীরা। তাঁদের পথ দেখানোর জন্যও কেউ ছিলেন না। সেই সঙ্গে মেলাপ্রাঙ্গনে ভারী ওজনের ডাস্টবিন বসানো ছিল। ভিড়ে তা চোখে পড়ছিল না। ধাক্কাধাক্কিতে ডাস্টবিনেও পড়ে যান অনেকে। ধাক্কা লেগে মাথা ফেটে যায় কারো কারো।
প্রতি ১৪৪ বছরে একবার অনুষ্ঠিত হওয়া মহাকুম্ভ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ। এবছরের মাঘী পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রচুর ভক্তের সমাগম ঘটেছিল, যা এই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে, দূর্ভাগ্যজনক ভাবে পদপিষ্ট হয়ে আহতের সংখ্যা শতাধিক, তাঁর মধ্যে নিহতের সংখ্যা ৩০ এ দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে অসমের হাইলাকান্দি জেলার রয়েছে নিহত ১জন। নাম নীতি রঞ্জন পাল। পেশায় শহরের প্রতিষ্ঠিত মিষ্টি দোকান “ওঁম সুইটসের” কর্ণধার।
সূত্রের খবর,তবে অসম সরকার এককালীন ৫লক্ষ টাকা ঘোষণা করেছেন অসমের ৩ জন নিহত পুণ্যার্থীর জন্য। তবে নিহত এবং আহতের খবরে রীতিমতো দুশ্চিন্তার প্রহর গুনছে অনেকেই। অনেকেই এই আকস্মিক দূর্ঘটনার খবরে নির্ধারিত যাত্রা ও বাতিল করেছে বলে জানা যায়।
হাইলাকান্দি থেকে তীর্থযাত্রায় আসা নীতি রঞ্জন পাল গুরুতর আহত অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি করা হয় সেখানকার প্রশাসনের সহযোগিতায় তবে শেষ পর্যন্ত তিনি প্রাণ হারান কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর খবরে বরাক উপত্যকায় নেমে আসে শোকের ছায়া।
এই মর্মান্তিক ঘটনা সংঘটিত হয় সঙ্গম তীরে, অমৃত স্নানের পূর্বমুহূর্তে, যেখানে অসংখ্য ভক্ত একত্রিত হয়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত ভিড় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর তাৎক্ষণিক সাড়া না দেওয়ার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দ্রুত সহায়তার জন্য আবেদন করা হলেও, অভিযোগ অনুযায়ী, পুলিশ ও সিআরপিএফ যথাসময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়।
যদি অভিযোগ সত্যি হয় এবং নিরাপত্তা বাহিনী যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করে থাকে, তবে এটি শুধুমাত্র অব্যবস্থাপনার নিদর্শন নয়, বরং ভবিষ্যতে তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুতর প্রশ্নচিহ্ন দেখা যায়! এত বড় ধর্মীয় সমাবেশে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত স্থানীয় প্রশাসন সহ রাজ্য সরকারের বললেন সচেতন মহল।
এ ধরনের বিশাল জনসমাগমে ভিড় ও অসুবিধা থাকা স্বাভাবিক। তাই, পুণ্যার্থীর ও উচিত সতর্ক থাকা, নিজেদের নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করা এবং অন্যদের প্রতি সংবেদনশীল হওয়া, যাতে অযথা আতঙ্ক সৃষ্টি না হয় এবং সকলের জন্য এক শান্তিপূর্ণ ও সুরক্ষিত অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করা যায়।
তবে সবমিলিয়ে দূর্ভাগ্যজনক ঘটনায় অধিকাংশ মানুষের অভিযোগের তীর স্থানীয় প্রশাসন এবং পরিচালনা মণ্ডলীর পর্যাপ্ত পরিকল্পনার অভাব এবং ব্যর্থতার উপর।